
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যার পর লাশ গুমের মামলায় মো. সোলেমান নামের ১ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ ওসমাণ গনি এ রায় দেন। এসময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. সোলেমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে হাজতে নেয়ার পথে সোলেমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোলেমান টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল এলাকার মৃত ছৈয়দ করিমের ছেলে।
নিহত শিশু মাহিয়া (৬) মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইরারডেইল এলাকার মোহাম্মদ আতাউল্লাহ’র মেয়ে। সে দক্ষিণ সাইরারডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন টিটু রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুনিকে দণ্ডিত করার ফলে অপরাধীরা আর এ ধরনের অপরাধ করার সাহস পাবেন না। আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতের রায় দিয়েছেন বিচারক।’
মামলার বাদী এবং ভিকটিমের পিতা মো. আতাউল্লাহ জানান, তার মেয়ে মাহিয়া ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পর বাড়ির পাশে খেলাধুলা করছিল। এ সময় তাকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও হত্যা করে মৃতদেহ গুম করা হয়। পরে পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়া এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মাহিয়ার পিতা ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মহেশখালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর আজ এ রায় ঘোষণা করা হয়।
আদালতের নথিপত্র মতে, ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বিকেলে বিদ্যালয় থেকে ফিরে বাড়ির সামনে খেলছিল ওই শিশু। এসময় কেক ও জুসের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ঘরে ডেকে নেয় সোলেমান। সেদিন সোলেমানের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। একপর্যায়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন সোলেমান শিশুটিকে একটি লাগেজে ভরে নিয়ে যায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া বাঁধে। সেখানে গিয়ে লাগেজ খুলে দেখে শিশুটি মারা গেছে। এরপর কাদামাটিতে লাশ পুঁতে রাখে সে।
শিশুটিকে হত্যা করার পরও পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল সোলেমান। ওইদিন রাতেই শিশুটির বাবার কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সে। পরে শিশুর পরিবার থানায় নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পুলিশ তদন্তে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। শিশুর বাবা ৩ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। মুক্তিপণের জন্য ব্যবহার করা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১০ ডিসেম্বর বিকেলে সোলেমান ও তার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ।
তবে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শোয়েব উদ্দিন খানের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোলেমান পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর