
বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস গতকাল বুধবার এক রায়ে ষষ্ঠ শ্রেণির মাদ্রাসা পড়ুয়া এক ছাত্রীকে অপহরণ করে হত্যা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান আসামি মো. হৃদয় খানকে (২০) মৃত্যুদণ্ড, দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং সহযোগী জাহিদুল ইসলামকে (১৯) পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার পূঁজাখোলা ইসলামপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম খানের ছেলে মো. হৃদয় খান এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আমতলী থানায় ওই দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে তানজিলা ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশের বাড়ির ক্ষেতে শাক তুলে ঘরে রেখে আবার বাইরে যায়। দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে না আসায় তার বাবা ও মা বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকেন। পরের দিন বাদী আমতলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। বাদীর ছেলে ইমরান তার বাবাকে জানায় যে, তার ফোনে অজ্ঞাতনামা একজন মেসেজ দিয়ে বলেছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে মাদ্রাসাছাত্রীকে ছেড়ে দিবে। বাদী বিষয়টি পুলিশকে জানান।
পুলিশ ৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান আসামি হৃদয় খানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে যে, সে ৫ ফেব্রুয়ারি বাদীর মেয়েকে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে। পরে মুক্তিপণ না পেয়ে আমতলীর জনৈক নূর মোহাম্মাদ খানের বাড়ির সামনে হোগল পাতার মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে। বাদীর মেয়ে ধর্ষণের কথা বলে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় হৃদয় বাদীর মেয়ের হিজাব দিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। আসামি হৃদয় ৮ ফেব্রুয়ারি আমতলীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। হৃদয় খানের দেখানো মতে পুলিশ মাদ্রাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে।
বাদী বলেন, "আমার নাবালিকা মেয়েকে আসামি হৃদয় অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গোপন করার জন্য হোগল পাতার মধ্যে দুইজনে লুকিয়ে রাখে। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।"
আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল ওয়াসি মতিন বলেন, "বাদী অভিযোগ করেছে তার মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত নেই। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমার মক্কেল উচ্চ আদালতে আপিল করবে।"
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু বলেন, "১২ বছরের একটি ছোট মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও লাশ গোপন করা একটি জঘন্য অপরাধ। এই বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছালে অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর