
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের হয়েছে। তিন বাম সংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম এ রিট দায়ের করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য।
তবে শিশির মনির জামায়াতপন্থি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কীভাবে লড়েন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। আবিদুল ইসলামের এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি বলেছেন, সে ছোটভাই মানুষ। হয়তো ভুল করে বলে ফেলেছে। আমি মাইন্ড করিনি।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে যুক্ত হয়ে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
টকশোতে দেখা যায়, উপস্থাপক অ্যাডভোকেট শিশির মনিরকে প্রশ্ন করে বলছেন, ‘আবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রশ্ন করেছেন যে, আপনি জামায়াতের আইনজীবী হয়ে ডাকসুর মামলায় কীভাবে যুক্ত হলেন? এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?’ এসময় অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি অনলাইনে। সে ছোটভাই মানুষ। হয়তো ভুল করে বলে ফেলেছে। আমি মাইন্ড করিনি। ছোট মানুষ, ও বুঝতে পারেনি। এজন্য বলে ফেলেছে, তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি তার প্রতি একদমই কিছু মনে করিনি। ছোট মানুষের ছোট কথা হয়েছে, এই আরকি।’
এরপর উপস্থাপক জানতে চান তিনি শুধু ডাকসুর এই মামলায় লড়ছেন নাকি আরও আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত? এ প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে আমি অনেক মামলায় লড়েছি। অলমোস্ট সকল মামলায়ই আমরা বিজয়ী হয়েছি। এটা হয়তো আমার ছোটভাই আবিদ জানেন না। না জানার কারণেই হয়তো তার মুখ দিয়ে কথাটা বের হয়ে গেছে। আমি মনে করি, সে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা বলেনি। কথার কথা বা মুখ ফসকে এটা বলে ফেলেছে, এর চেয়ে আর বেশিকিছু মনে করিনি।’
প্রসঙ্গত, গতকাল (সোমবার) ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন।
এর আগে, এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এদিন বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ডাকসুর নির্বাচনপ্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ ওই আদেশ দিয়েছিলেন।
ওই আদেশের ফলে ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ডাকসু নির্বাচন আটকে গিয়েছিল। হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন।
এদিকে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ও আলোচিত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরকে এই রিটের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করায় ডাকসুর ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম আবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সোমবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই রিটের পক্ষে যে আইনজীবী নিযুক্ত করেছেন সে হচ্ছে শিশির মনির। হে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আজকে থাকার কথা ছিল কবরে, কিন্তু আছি এখানে। আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সেই প্রশাসনে বসেছে। তোমাকে তো কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বসানো হয়নি।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর