• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৪৯ সেকেন্ড পূর্বে
মোহাম্মদ ফয়সাল
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:২১ বিকাল

হাসপাতালে বেডে কাতরাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জোবরাবাসী

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীরা। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মাথায়, হাতে-পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। যারা কিছুটা সুস্থ হয়েছে তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইফ সাপোর্টে রয়েছে দুই শিক্ষার্থী। যাদের একজনের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সারাদিন ধরে চলা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুর ও দোকানপাট লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় গত মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সংঘর্ষের জেরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে চবি সংলগ্ন জোবরা গ্রাম এখন পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গ্রামের রাস্তাঘাটে শুধু নারীর দেখা মিলছে। তবে তারা আছেন আতঙ্কে। এছাড়া পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় নারীরা জানান, রাতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিরোধ করার মতো কেউ নেই। ফলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে গতকাল ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে তিন শতাধিক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৪ জন, নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত সোমবার বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে দুজন লাইফ সাপোর্টে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন ভর্তি আছেন।

এছাড়া এক শিক্ষার্থীর রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এনআইসিবিডিতে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার) পাঠানো হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর হোসেন।

চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক ও ট্রমাটলজি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন চবি শিক্ষার্থী পলাশ মল্লিক। এক হাতে ব্যান্ডেজ করা পলাশ বসে আছেন। তার পিঠে কোপানোর কারণে ঠিকমতো শুয়ে থাকতে পারছেন না। তার এক বেড পরেই রয়েছেন এহসান। তারও মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়েছে স্থানীয়রা।

জানতে চাইলে পলাশ মল্লিক বলেন, প্রক্টর স্যার আহত হয়েছেন শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে স্যারকে নিয়ে চলে আসার সময় আমাদের ওপর হামলা করা হয়। গ্রামবাসী রামদা দিয়ে আমাদের কুপিয়েছে। আমার সঙ্গে ইমতিয়াজ ছিল। তাকেও মাথায় খুব মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। সেখান থেকে সহপাঠীরা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

এদিকে গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তিনি চার দিন ধরে পার্কভিউ হাসপাতলের লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তার কনশাস লেভেল (চেতনার মান) এখন ৬–এর আশপাশে। একজন স্বাভাবিক মানুষের কনশাস লেভেল ১৫। এটি ১০–এর ওপরে ওঠার আগপর্যন্ত তাকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। একই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা আহত আরেক শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়ার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তারও মাথার খুলিতে জখম রয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত সোমবার বিকেলে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়, তবে তাকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

ইমতিয়াজের সঙ্গে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় আহত আরেক শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়াকে। তারও মাথার খুলিতে জখম রয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সোমবার বিকেলে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়, তবে তাকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

পার্কভিউ হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ইমতিয়াজের বিষয়ে বিকেলে মেডিকেল বোর্ড বসেছে। এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। মামুনের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হতে পারে।’

ইমতিয়াজের ভাই আসাদুজ্জামান সজীব বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সঙ্গে বুধবার দুপুরে তারা মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।'

এদিকে পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত ও তদন্তে প্রাপ্ত মোট ৮ জন আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে ৯৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত মামলা দায়ের করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. ইমরান হোসেন প্রকাশ এমরান হোসেন (৩৫), মো. হাসান প্রকাশ হাসাঈন (২২), রাসেল প্রকাশ কালো রাসেল (৩০), মো. আলমগীর (৩৫), মো. নজরুল ইসলাম (৩০), মো. জাহেদ (৩০), মো. আরমান (২৪), দিদারুল আলম (৪৬)।

হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একাডেমিক ও সামাজিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীরা যেন মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করছে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির বলেন, ‘জোবরা গ্রাম এখন লণ্ডভণ্ড। এই গ্রাম পুনর্বাসন করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় ও আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাও জরুরি। গ্রামবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। এখন কেন এমন হয়ে গেল তা আমাদের ভাবাচ্ছে।

এদিকে পুলিশের প্রতিবেদনের তথ্যে জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাফিয়া খাতুনের ভাড়া বাসার গেট খোলাকে কেন্দ্র করে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এসময় আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠি-সোটা, রামদা ও ইট-পাটকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যৌথবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও হামলাকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও আক্রমণ চালায়।

সংঘর্ষের সময় প্রক্টরিয়াল বডির নোহা গাড়ি (চট্টগ্রাম-চ-৫১-০০১০), বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির পিকআপ (চট্টগ্রাম-ম-৫১-০০১৫), বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি (চট্টঃ মেট্রো-১১-০৮২২) এবং নিরাপত্তা প্রধানের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলসহ অন্তত চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে আনুমানিক সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এর আগে গত শনিবার ও রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে চবির নিরাপত্তা দপ্তর থেকে অস্ত্র লুটের অভিযোগ ওঠে। পরে এ ঘটনায় মঙ্গলবার মামলা দায়েরের কথা জানায় চবি প্রশাসন। তাছাড়া অস্ত্র লুটের ঘটনায় করা হয় জিডি।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com