
অসুস্থ বরকে শুশ্রুসার জন্য দিনক্ষণের আগেই হাসপাতালে বিয়ে করলেন বর-কনে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভিন্ন এ বিয়ে ইতিবাচক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। কনের প্রশংসায় ভেসেছে নেটিজেনরা।
মানিকগঞ্জ শহরের ছেলে আনন্দ সাহা (৩০) ও কন্যা অমৃতা সরকার (২৫) ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ হয় বছরখানেক আগে। এরপর পারিবারিকভাবে দুই পরিবারের সম্মতিতে আশীর্বাদ শেষ হয়। আগামী ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ নির্ধারিত হয় বিয়ের দিনক্ষণ।
এরই মধ্যে গত মাসের (আগস্ট) ৭ তারিখ রাজধানী ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ ফেরার পথে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হন বর আনন্দ সাহা। তার দুই হাত ও একটি পা ভেঙে যায়, কোমরে লাগে প্রচণ্ড আঘাত। দুর্ঘটনার পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তাকে মানিকগঞ্জের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, চলাফেরাতেও পুরোপুরি অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
প্রিয়জনের এমন সংকটময় সময়ে পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন অমৃতা। শুধু পাশে থাকা নয়, অসুস্থ আনন্দকে একা ফেলে যেতে চাননি তিনি। তাই দুই পরিবারের আলোচনায় বিয়ের আয়োজন এগিয়ে আনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ শহরের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতাের হলরুমেই সম্পন্ন হয় তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালের সেই বিয়ের ছবি। এতে দেখা যায়- হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা আনন্দ কনের মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন। ধর্মীয় আচার মেনেই সম্পন্ন হয় বিয়ে। উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের স্বজনেরা। এরপর থেকেই নেটিজেনরা বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক প্রশংসা করছেন।
আনন্দ সাহা মানিকগঞ্জ শহরের চাঁন মিয়া লেন সড়কের বাসিন্দা। বাবা অরবিন্দ সাহা (৬৫) স্থানীয় ব্যবসায়ী। শহরে তার কয়েকটি ব্যবহারিক পণ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নববধূ অমৃতা সরকার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী গ্রামের মেয়ে। তিনি বর্তমানে মানিকগঞ্জ শহরের খানবাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
মানিকগঞ্জ শহরের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনন্দ সাহা। হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট প্রধান সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোগীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই হাসপাতালে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। অল্পসংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এতে অন্য কোনো রোগীর স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
আনন্দের বাবা অরবিন্দ সাহা বলেন, ডিসেম্বরে বড় আয়োজনে বিয়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে এখন আমাদের প্রথম কাজ আনন্দের চিকিৎসা ও সেবা। যেহেতু আমরা আগেই আশীর্বাদ করে রেখেছিলাম এখন আমার ছেলের শুশ্রুষার জন্য দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গতকাল রাতে সীমিত পরিসরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। বরের দ্রুত সুস্থতা এবং নবদম্পতির জন্য দোয়া চাই।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর