
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও হামলার অভিযোগে নতুন করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর ফলে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলায় মোট ১ হাজার ৬৫০ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ–এর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) পোর্ট অফিসার মো. আবদুল ওয়াকিল বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান মামলাটি নথিভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মনির উদ্দিনকে (৪৩)। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকেও আসামি করা হয়েছে।
ওসি ইলিয়াস খান জানান, শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিআইডব্লিউটিএ–এর নেতৃত্বে প্রশাসন বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়া ও নতুন বাহারছড়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে স্থানীয় শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তারা প্রধান সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কে ব্যারিকেড দেন, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং ঠেলাগাড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় বুলডোজার ভাঙচুর ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টাও হয়। এর প্রেক্ষিতে রোববার মামলাটি দায়ের করা হয়।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও বাধাদানের ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিনে কার্যক্রম পণ্ড হলে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ৪০০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা হয়। এই তিন মামলায় মোট ১ হাজার ৬৫০ জনকে আসামি করা হলো।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটার প্রবাহিত বাঁকখালী নদী রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় দখল সবচেয়ে বেশি।
বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ থেকে ১২ বছরে শুধু এ অংশেই তৈরি হয়েছে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় ভূমি অফিস ও বিআইডব্লিউটিএর তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন শ’ প্রভাবশালী দখলদারের নাম উঠে এসেছে।
২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সরকার বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক হিসেবে বিআইডব্লিউটিএকে নিয়োগ দেয়। তখন ৭২১ একর জমি হস্তান্তরের নির্দেশনা থাকলেও জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে নদীবন্দর গড়ে ওঠেনি, বরং দখলদারি বেড়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যৌথ অভিযানে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন উদ্ধার করা হয়েছিল প্রায় ৩০০ একর জমি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ওই জায়গা আবার দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ হওয়া এলাকায় ফের তৈরি হয় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ ও আরএস জরিপের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি চার মাসের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
এই নির্দেশনার পর ৩০ আগস্ট কক্সবাজার সফরে যান নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বিশেষ সমন্বয় সভায় জানান, সমন্বিত তালিকা করে নদী দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে প্রথম দুই দিনে ৪ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও অন্তত ৫৬ একর নদীর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে উচ্ছেদ অভিযানের পঞ্চম দিনে নুনিয়ারছড়া ও বাহারছড়ায় পৌঁছানোর আগেই বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন। শত শত মানুষ সড়ক অবরোধ করলে অভিযান ভেস্তে যায়। এরপরই দায়ের হলো নতুন মামলাটি।
অভিযানের বিরোধিতা করে স্থানীয় অনেকে বলছেন, বহু পরিবার ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। তাদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা না করেই অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে প্রশাসনের দাবি, বাঁকখালী নদী রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দখলদারদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর