
প্রক্টর জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু( নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। আজ মঙ্গলবার রাতে টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
আব্দুল কাদের বলেন, ‘আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ক্ষমতার ভাগাভাগির রাজনীতিতে নিমজ্জিত। আমরা দেখেছি, ভিসি, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টররা সবাই ভাগাভাগির মাধ্যমে পদ বণ্টন করেছেন। অনেকে জামায়াতপন্থী, অনেকে বিএনপিপন্থী। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে ভিসি একটি সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম (এসএমটি) গঠন করে প্রক্টরকে ক্ষমতাশালী করেছেন। অথচ প্রক্টর শিক্ষকের মর্যাদায় ভিসির অনেক নিচে। এভাবে তাকে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে বসানো হয়েছে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের নির্বাচন ছিল না। এটা স্পষ্টত জামায়াত-বিএনপি, ছাত্রদল-শিবিরের মধ্যে হিসাব-নিকাশ ও ক্ষমতার ভাগাভাগির নির্বাচন। আমরা আগে থেকেই বলেছি, এই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অথর্ব, আনাড়ি এবং নতজানু কমিশন। এরা দুইভাগে বিভক্ত, একটি ভাগ ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে, অন্যটি শিবিরের। প্রচারণা থেকে মনোনয়নপত্র পর্যন্ত তারা অনেক বিধিনিষেধ দিলেও প্রার্থীরা নিয়ম ভঙ্গ করেছে, আর কমিশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।’
ডাকসু নির্বাচনের এ ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কিন্তু কমিশনের অদক্ষতা প্রমাণ করেছে তারা ব্যর্থ। ভেতরে-বাইরে উভয় দিক থেকে ছাত্রদল ও শিবির মেকানিজম চালিয়েছে। অভিযোগ ছিল সাদিক কায়ুম ভেতরে থেকে মেকানিজম করেছে, বাইরে থেকেও ছাত্রদল প্রভাব খাটিয়েছে। অনেকবার রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ভোটকেন্দ্রে আগে থেকেই ব্যালট পেপারে নাম পূরণ করা ছিল। এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে কেবলমাত্র সেই ব্যালট পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এটা কোনো সমাধান নয়।’
আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রক্টর হলগুলোতে শৃঙ্খলা কমিটির নামে ছায়া সরকার চালাচ্ছেন, সব জায়গায় মেকানিজম করছেন। ১৭০ জন পোলিং অফিসার নিয়োগের বিষয়েও কেবল প্রক্টরই জানতেন কারা দায়িত্বে থাকবে। সব মিলিয়ে আজকের নির্বাচন শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে অংশ নিলেও প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং দলীয় প্রভাবের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আজকে সারাদিন আমরা অনেক অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছি। নির্বাচন কমিশন ন্যুনতম যে সাজসজ্জা বা ডেকোরেশন ক্যাম্পাসে করার কথা ছিল, তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ১০০ মিটারের ভেতরে প্রচারণা নিষিদ্ধ করার যে নিয়ম, তার স্পষ্ট লাল দাগ টানা হয়নি। কোথা থেকে ভোটার প্রবেশ করবে, কোথা থেকে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না এসব রুলস ও রেগুলেশন অনুযায়ী পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব ছিল কমিশনের, কিন্তু তারা তাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও পরে বিভিন্ন হলে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। বিশেষ করে একুশে হল, রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল এ তিনটি হলে সরাসরি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, একপক্ষ আরেকপক্ষকে দোষারোপ করছে। ছাত্রদল শিবিরকে, আবার শিবির ছাত্রদলকে দায়ী করছে। অথচ ক্যাম্পাসে স্পষ্ট দেখা গেছে, বিএনপি এবং জামায়াত উভয় সংগঠনই চারপাশে অবস্থান করছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তারা তাদের ছাত্রসংগঠনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর