
পদ স্থগিত হওয়া বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, "যখন দেখছি মুক্তিযুদ্ধ রাখবে না, যখন দেখছি মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিয়ে দেবে, যখন দেখছি ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্ত এ দেশে বৃথা যাবে, যখন দেখছি দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের মূল্য থাকবে না, তখন আমি মনে করেছি, নাহ্! আমি ছাড়ব না। আমি তাদেরকে ছাড়ব না যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে।" তিনি আরও বলেন, এই কথা বলতে বলতে এমন এক জায়গায় পৌঁছলাম, যখন আমার সাথে যুক্তিতে পারে না তখন ওরা বলা শুরু করল, 'আরে ওতো পাগল, ওতো ফজু পাগলা।' আমাকে পাগল উপাধি দিয়ে রাজাকাররা বাঁচতে চায়। গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জের মিঠামইন বাজার শেডে মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান এসব কথা বলেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা গণসংবর্ধনা সভার আয়োজন করলেও বিকেলে সভা শুরু হওয়ার আগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ নৌকাযোগে ও সড়ক পথে মিছিল নিয়ে মিঠামইন সদরে যান। এসব মিছিল থেকে ফজলুর রহমানের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। ফজলুর রহমান গণসংবর্ধনা সভাস্থলে পৌঁছালে 'ফজলুর রহমান, ফজলুর রহমান' স্লোগানে মুখরিত হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নিজ উপজেলা মিঠামইনে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফজলুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা এবং হাজার হাজার জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হন।
ফজলুর রহমান বলেন, "আমি আপনাদের সামনে সারা জাতিকে শপথ করতে চাই— আমি কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধের বাইরে কোনো কাজ করব না, মুক্তিযুদ্ধের বাইরে যাব না। মুক্তিযুদ্ধ এ দেশ থেকে যাবে না। এই যে স্টেজে বসে আছে মুক্তিযোদ্ধারা, তাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, তাদেরকে আমি স্যালুট দিয়ে বলছি, হে মুক্তিযোদ্ধারা, আমি তোমাদের ভাই। তোমরা আমার সাথে আছো, তোমরা আমাকে আনছো, কথা দিয়ে গেলাম— জীবন অথবা মৃত্যু কোনো রাজাকারের-আলবদরের বাচ্চারা মুক্তিযুদ্ধকে এ দেশ থেকে বিনাশ করতে পারবে না।"
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মানুষের উদ্দেশ্যে ফজলুর রহমান বলেন, "জীবনে-মরণে কোনোদিন আমি আপনাদেরকে ছেড়ে যাব না। মৃত্যুর পর আমার লাশটা হাওরে আসবে, আপনাদের এলাকায় আসবে। আমি মরার পরে আপনাদের সিদ্ধান্তে এই এলাকাতে আমি কবরে ঘুমাব। আমি আপনাদের ছেড়ে যাব না।"
গণসংবর্ধনা সভায় মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ ভূঁইয়া, ফজলুর রহমানের সহধর্মিণী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা ও তার ছেলে ব্যারিস্টার অভীক রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সহিদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল মোতালিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা কুটিল চন্দ্র দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খালেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল লতিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনীল চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদেক মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল খালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তৃতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহিম বলেন, "এই বাংলাদেশে গত ১৬ বছর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে মানুষটা সবচেয়ে সরব ছিল, তার নাম অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। মামলা-হামলার ভয়ে যখন অনেকেই চুপিসারে ছিল, তখন ফজলুর রহমান মাথা উঁচু করে, বুক উঁচু করে কথা বলেছেন। যত কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক না কেন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের সাথে আছি, থাকব।" আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ চেয়ে গণসংবর্ধনা সভার বক্তৃতায় অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, "দল আমাকে তিন মাসের শাস্তি দিয়েছে, এটা আমি মানি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধী মানুষ না। আগামী নির্বাচন আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমি আমার দলের মার্কা চাই— ধানের শীষ চাই।"
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর