
গাজীপুর সদর উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নবগঠিত সমন্বয়কারী কমিটি ঘোষণার পর থেকে একের পর এক পদত্যাগ শুরু হয়েছে। যুবদলের এক কর্মীসহ কয়েকজনের নাম অনুমতি ছাড়াই তালিকায় যুক্ত হওয়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর এনসিপির গাজীপুর সদর উপজেলা সমন্বয়কারী কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। তার আগের দিন, ৭ সেপ্টেম্বর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের স্বাক্ষরিত একটি প্যাডে এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে তা এনসিপির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়। এতে ইঞ্জিনিয়ার মো. জিহাদুল ইসলামকে প্রধান সমন্বয়কারী ও মেহেদি হাসান মিঠুনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী করে ৩৬ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু ঘোষণার মাত্র একদিন পর থেকেই একে একে বেশ কয়েকজন সদস্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা জানান, কমিটি প্রকাশের আগে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি, এমনকি নাম যুক্ত হওয়ার বিষয়েও তারা অবগত ছিলেন না। কমিটির ২৯ নম্বর সদস্য মহসিন হোসেন বলেন, "আমি যুবদলের একজন কর্মী। এনসিপির মতো একটি রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটিতে আমার নাম আসবে—এটা আমি জানতাম না। বিষয়টি জানার পরই আমি পদত্যাগ করেছি এবং নেতাদের জানিয়েছি।"
একইভাবে ১৭ নম্বর সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি বলেন, "কমিটি ঘোষণার দুই ঘণ্টা আগে এনসিপির এক নেতা আমাকে ফোন করে জানান কমিটি হবে। কিন্তু আমার নাম যুক্ত হচ্ছে, সেটা বলেনি। পরে বিষয়টি জানতে পেরে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করি।"
এছাড়া, ৩৪ নম্বর সদস্য রিফাত হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমি সাধারণ মানুষ, রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। হঠাৎ করে কমিটিতে আমার নাম দেখে হতবাক হয়েছি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেছি।"
এভাবে কারো অনুমতি ছাড়াই রাজনৈতিক কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করায় স্থানীয়ভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্টরা এটিকে "অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক" আচরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জি. মো. জিহাদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "যাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে তারা বিভিন্ন সময়ে এনসিপির প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন। সাইফুল ইসলাম ও রিফাত হাসানের সঙ্গেও আলোচনা করেই তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল। এখন তারা কেন পদত্যাগ করলেন, তা আমাদের জানায়নি। ফেসবুকের মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পেরেছি।"
যুবদল কর্মীর নাম কিভাবে এনসিপির কমিটিতে এল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কমিটি গঠনের সময় সবার সঙ্গে সমন্বয় করে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। মহসিন হোসেনের নাম ১নং সদস্য আল-আমিন খন্দকারের মাধ্যমে এসেছে। এই বিষয়ে আল-আমিনই বিস্তারিত জানাতে পারবেন।"
আল-আমিন খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, "মহসিন হোসেন আমার আত্মীয়। আমরা এনসিপির বিভিন্ন কার্যক্রমে একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেছি। তার সঙ্গে পরামর্শ করেই নাম দিয়েছিলাম।"
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল বলছে, যুবদল কর্মীর নাম জাতীয় নাগরিক কমিটির মতো একটি সংগঠনের তালিকায় চলে আসা শুধু অস্বস্তি তৈরি করেনি, বরং এনসিপির অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এতে সংগঠনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর