
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ছিল বৈধ সরকারকে উৎখাতের মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ। আন্দোলনকারীরা নিজেরাই ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারাই টার্গেট করে আন্দোলনরত লোকদের হত্যা করেছেন। এ দাবি করেছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তিনি এ দাবি করেন। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৮তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুনায়েদ।
আমির হোসেন তার জেরায় দাবি করেন, কোটা সংস্কার সমাধানের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু তার আন্তরিকতা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা একের পর এক বেআইনি কর্মসূচি দিয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বা ‘নাতিপুতি’ বলেননি। তার কথার সঠিক অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ‘রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে আন্দোলনকারীরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করেছে।
আমির হোসেন আরও বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় আন্দোলনরত কোনো ছাত্র-ছাত্রী নিহত হননি। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে জুনায়েদ জবাবে বলেন, আন্দোলন দমন করার জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়।
জেরার এক পর্যায়ে আমির হোসেন জুনায়েদকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে আপনিও একজন ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন। জুনায়েদ এ দাবি নাকচ করে বলেন, এটা সত্য নয়। আন্দোলনে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তার দাবি উত্থাপন করে বলেন, আন্দোলনকারীরা ষড়যন্ত্র করে টার্গেট করে করে লোকদের হত্যা করেছে। কারণ, এত আন্দোলনকারীর মধ্যে এত অল্পসংখ্যক কেন মারা যাবে বা আপনিও নিরাপদে ছিলেন কীভাবে?’ জুনায়েদ জবাব দেন, ‘এটা সত্য নয়।’
আমির হোসেন আরও দাবি করেন, ২১ জুলাই কোটা সংস্কার বিষয়ে আপিল বিভাগে একটি আদেশ হওয়ার কথা থাকায় ছাত্রদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলা ছিল সরকারের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। ফেসবুক প্রোফাইল লাল করাসহ সব কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারীদের দীর্ঘদিনের লালিত নীলনকশার ফলশ্রুতি; অর্থাৎ সরকারকে উৎখাতের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ।
জুনায়েদ এসব দাবিকে ‘সত্য নয়’ বলে জানিয়ে বলেন, আমাদের কর্মসূচি ছিল ন্যায্য দাবির প্রতিফলন। সরকারের কোনো আন্তরিকতা ছিল না, ছিল দুরভিসন্ধিমূলক।
শেষে আমির হোসেন শেখ হাসিনা ও কামালকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ড বা নৃশংসতার সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জড়িত ছিলেন না।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে জুনায়েদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় শেষ হয়। এরপর তার জেরা শুরু হয়। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আজ মুলতবি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ, মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
আইন ও আদালত এর সর্বশেষ খবর