
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে মন্দির সাজানো ও প্রতিমা তৈরির কাজ। জেলার বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা শিল্পীরা দেবী দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও মহিষাসুরের প্রতিমা তৈরিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সেনাবাহিনী প্রতিটি উপজেলায় কাজ করবে। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় অবস্থান নিয়েছে এবং মণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্যসচিব রিংকু রায় জানান, উপজেলায় সেনাবাহিনী এসেছে এবং পূজা উদযাপনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, প্রতি বছরের মতো এবারও তাঁদের উপজেলায় সুশৃঙ্খলভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার ৪২৪টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে ৪২০টি সার্বজনীন ও ৪টি ব্যক্তিগত মণ্ডপ। সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ দিরাই উপজেলায় (৭০টি), এরপর জেলা সদর উপজেলায় ৫১টি। সদর উপজেলার মধ্যে ২৩টি সার্বজনীন ও ২টি ব্যক্তিগত এবং পৌরসভায় ২৫টি সার্বজনীন ও ১টি ব্যক্তিগত পূজামণ্ডপ রয়েছে। এছাড়াও জামালগঞ্জে ৫১টি, জগন্নাথপুরে ৩৯টি, শাল্লায় ৩২টি, মধ্যনগরে ৩২টি, ছাতকে ৩০টি, তাহিরপুরে ২৯টি, বিশ্বম্ভরপুরে ২৯টি, ধর্মপাশায় ২১টি, শান্তিগঞ্জে ২১টি এবং দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৯টি মণ্ডপ রয়েছে।
মৃৎশিল্পী শুভ্রত জানান, প্রতিমা তৈরির উপকরণ যেমন মাটি, বাঁশ ও রঙসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগে একটি দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেশি লাগছে। বড় আকারের প্রতিমা তৈরিতে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকারও বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় এখন লাভ কম।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর পাড়ের রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা সমর দাম জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজামণ্ডপগুলোতে শারদীয় দুর্গাপূজা পালনের প্রস্তুতি ও প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার পণ্ডুব গ্রামের বাসিন্দা আশীষ দাশ জানান, দুর্গাপূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে হাওরাঞ্চলের হিন্দু গ্রামগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে এবং অধিকাংশ মন্দিরেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা দেবনাথ জানান, উপজেলায় ২৯টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাঁদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমান কান্তি রায় জানান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের আশ্বস্ত করায় তাঁরা আশা করছেন যে, সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা আনসার ভিডিপির কমান্ডেন্ট রোবায়েত বিন সালাম জানান, মণ্ডপগুলোতে প্রায় ৩ হাজার আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে। অতিগুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ৮ জন এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মণ্ডপগুলোতে ৬ জন সদস্য নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন জানান, নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা পালন নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়, সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মণ্ডপ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির জানিয়েছেন, সীমান্ত অঞ্চলে শূন্য থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২২টি পূজামণ্ডপে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর