
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পারবিঞ্চপুর গ্রাম এলাকায় হঠাৎ করে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষক পরিবারগুলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত পারবিঞ্চপুর বাজারের অন্তত ১০টিরও বেশি দোকানঘর এক রাতে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এ সময় বাজার সংলগ্ন গাছপালাও ভাঙনের কবলে পড়ে। হঠাৎ দোকানঘর হারিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন দিশেহারা। কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোও পড়েছে চরম সংকটে।
স্থানীয় শরিফুল শেখ জানান, "প্রতিবছরই এখানে ভাঙন হয়। কিন্তু এবার এত ভয়াবহ হবে তা কল্পনাও করিনি। একরাতে পুরো বাজার ভেঙে গেছে। যদি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হয়, তবে পুরো এলাকা নদীতে মিলিয়ে যাবে।"
ক্ষতিগ্রস্ত চায়ের দোকান মালিক দিলরুবা বেগম বলেন, "আমি একজন মহিলা হয়ে বছরের পর বছর ধরে এই চায়ের দোকান দিয়েই সংসার চালাতাম। দোকান নদীতে চলে যাওয়ায় এখন আর কোনো আয়-রোজগারের পথ নেই। ছেলেমেয়েদের কীভাবে খাওয়াবো সেই চিন্তায় দিন কাটছে তার।"
চা দোকান মালিক আতিয়ার মিনা বলেন, "ছোট্ট দোকান ছিল, সেটাই আমাদের পরিবারের ভরসা। নদী গিলে ফেলেছে দোকানটা। এখন আর কোনো কাজ নেই, পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। সরকার যদি দ্রুত সাহায্য না করে তবে আমাদের পথে বসতে হবে।"
মুদি দোকান মালিক নজরুল শেখ বলেন, "এই দোকান থেকে যা আয় হতো তাই দিয়ে সংসার চলত। এখন দোকান হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হলে আমাদের বাঁচার উপায় নেই।"
অন্য এক মুদি, চা ও কসমেটিকসের দোকান মালিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, "একসাথে সব কিছু হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। দোকান ছিল আমার একমাত্র ভরসা। সবকিছু নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় যাবো, কী করবো বুঝতে পারছি না।"
পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, "এভাবে বাজার ভেঙে গেলে পুরো এলাকার অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। শুধু বাজার নয়, রাস্তা, মসজিদ, স্কুলসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার যদি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করে তবে অচিরেই পারবিঞ্চপুর বাজার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।"
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, "পুরুলিয়া ইউনিয়নে পার বিষ্ণুপুর বাজারে ভাঙনের খবর শোনা মাত্রই অফিস থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। সেখানে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, ভাঙন প্রতিরোধে যত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।"
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর