
পঞ্চগড়ের নিলাম বাজারে একটি ব্রোকার হাউজের ক্যাটালগ থেকে উত্তরা গ্রিন টি ইন্ডাস্ট্রিজ-এর দেওয়া ২৭ হাজার ৫০০ কেজি প্রক্রিয়াজাত চা উধাও হয়ে গেছে।
সরকারের কর পরিশোধের ভয়ে বর্তমানে ওই চা ওয়্যারহাউজ, ব্রোকার হাউজ এবং ফ্যাক্টরি– কোথাও নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কারখানার মালিক, ওয়্যারহাউজ বা ব্রোকার হাউজ– কোথাও উধাও হওয়া চা মজুদ বা তালিকায় নেই। প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের এই চা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এর দায় কেউ নিচ্ছেন না। ব্রোকার হাউজ বলছে, চা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খানের নির্দেশে চা ফ্যাক্টরি থেকে নমুনা নিয়ে অনলাইন নিলাম বাজারের ক্যাটালগে উত্তরা টি ইন্ডাস্ট্রিজের ৩০ হাজার কেজি চা তালিকাভুক্ত করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে কারখানা কর্তৃপক্ষ ওয়্যারহাউজে চা সরবরাহ না করায় ক্যাটালগ থেকে ২৭ হাজার ৫০০ কেজি চা তুলে নেওয়া হয়। চা বোর্ড বলছে, চা উধাও হওয়ার ঘটনায় ওয়্যারহাউজ, কারখানা এবং ব্রোকার হাউজ দায়ী; এখানে নিলাম বাজারে তোলার জন্য চা বোর্ড কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
জানা গেছে, পঞ্চগড় অনলাইন নিলাম বাজারে ১১ নম্বর নিলাম অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ সেপ্টেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, নিলামের সাত দিন পূর্বে ক্যাটালগের মাধ্যমে ওয়্যারহাউজে মজুদ চা ব্রোকার হাউজ বিক্রয়ের জন্য নিলাম বাজারে তোলে।
সেই সূত্রে, হিমালয় ব্রোকার হাউজ গত ১৫ সেপ্টেম্বর নিলাম বাজারের ক্যাটালগে উত্তরা গ্রিন টি কারখানার ৩০ হাজার কেজি চা বিক্রয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করে। পরে পঞ্চগড় গ্রিন লিফ ওয়্যারহাউজে উত্তরা গ্রিন টি ইন্ডাস্ট্রিজ ৬০০ বস্তার বিপরীতে মাত্র ৫০ কেজির ৫০ বস্তা চা সরবরাহ করায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর ৫৫০টি ৫০ কেজির বস্তার ২৭ হাজার ৫০০ কেজি চা ক্যাটালগ থেকে মুছে দেওয়া হয়। এরপরই প্রায় ৫৩ লাখ টাকার ২৭ হাজার ৫০০ কেজি চায়ের কোনো হদিস নেই।
হিমালয় ব্রোকার হাউজের স্বত্বাধিকারী বাবুল হোসেন জানান, আসলে নিয়ম হচ্ছে ওয়্যারহাউজে সরবরাহকৃত চায়ের নমুনা নিয়ে ক্যাটালগে চা বিক্রির জন্য তোলা হয়। কিন্তু তিনি উত্তরা গ্রিন টি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খানের নির্দেশে ক্যাটালগে ওই চা বিক্রয়ের জন্য তুলেছিলেন।
কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উত্তরা গ্রিন টি মাত্র ৫০ বস্তা চা পঞ্চগড় গ্রিন লিফ ওয়্যারহাউজে সরবরাহ করেছে। এজন্য ক্যাটালগ থেকে ২৭ হাজার ৫০০ কেজি চা মুছে দিয়েছেন। কেন মুছে দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি চা বোর্ডের মৌখিক নির্দেশে নিলাম বাজারের ক্যাটালগে ২৭ হাজার ৫০০ কেজি চা সংযুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও, উধাও হওয়া চা নিলাম বাজার থেকে অপসারণের কারণ হিসেবে উত্তরা গ্রিন টি ফ্যাক্টরির মালিক ওয়্যারহাউজে সরবরাহ না করার জন্য তাঁর ব্রোকার হাউজকে বস্তা সংকটের কারণে ওয়্যারহাউজে সরবরাহ করেনি মর্মে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই উধাও হওয়া চা উত্তরা গ্রিন টি ফ্যাক্টরিতে নেই। তবে উত্তরা গ্রিন টি ফ্যাক্টরির বর্তমান পরিচালক আরিফ হোসেন জানান, তাঁর দুই অংশীদার প্রায় ৩০ হাজার কেজি চা ফ্যাক্টরি থেকে নিলাম বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। পরবর্তীতে ওই চা নিলামে বা অন্য কোথাও বিক্রি হয়েছে। উধাও হওয়া ওই চা তাঁর ফ্যাক্টরিতে মজুদ নেই। পঞ্চগড় গ্রিন লিফ ওয়্যারহাউজের মালিক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরা গ্রিন টি ফ্যাক্টরি থেকে কিছু চা ওয়্যারহাউজে এসেছিল, আবার সেই চা নিলামে বিক্রিও হয়েছে। বর্তমানে উত্তরা গ্রিন টি ফ্যাক্টরির কোনো চা ওয়্যারহাউজে নেই।
বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান জানান, আসলে নিলাম বাজারের ক্যাটালগে চা তোলার জন্য কোনো নির্দেশনা তিনি দিতে পারেন না, কারণ চা নিলাম বিক্রয়ের বিষয়টি চা বোর্ডের ট্রেড শাখা তদারকি করে। এজন্য সেখানে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে উধাও হওয়া চা বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে তিনি বলেছেন, উত্তরা গ্রিন টি ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে তাদের উৎপাদিত চা এবং মজুদকৃত চায়ের অমিল পাওয়া গেছে। সেই ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর