
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ কাজের বিভিন্ন বাধা দূর হয়েছে। পুরোদমে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে আগামীকাল বুধবার ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের দুর্দশাগ্রস্ত অংশ পরিদর্শনে আসছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সফরসূচি অনুযায়ী, উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বুধবার সকাল পৌনে ৭টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে আন্তঃনগর মহানগর প্রভাতী ট্রেনে যাত্রা করবেন। সকাল সাড়ে ৯টায় ভৈরববাজার জংশন স্টেশনে নেমে সড়কপথে রওনা হবেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ-সরাইল অংশের চলমান কাজ পরিদর্শনে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আগামীকাল বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় পরিদর্শনে আসছেন। এ খবরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় সওজ অফিস।
সরাইল বিশ্বরোড এলাকার ভাঙন অংশে তিন স্তরে ইট-বালু বিছানোর কাজ চলছে জোরেশোরে। তবে সড়কের মাঝখানে ইট ও বালুর স্তূপ ফেলে রাখায় উল্টো যানজট আরও বেড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জনদুর্ভোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করেই তড়িঘড়ি করে এই কাজ শুরু হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সফর শেষে হয়তো এই কাজ আগের মতো থেমে যাবে। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হবে বলেও তারা মনে করেন। তবে সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, এটি কোনো অস্থায়ী সংস্কার নয়— স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবেই কাজটি করা হচ্ছে।
সওজের কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সরকারি দপ্তর থেকে নির্দেশ আসে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে। এরপরই দ্রুত ইট-বালু বিছানোর কাজ শুরু হয়।
সরাইল বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকা থেকে সিলেটমুখী কুট্টাপাড়া মাঠ পর্যন্ত প্রায় ৩৭৫ মিটার অংশে (দুই সেকশনে) তিন স্তরে ইট-বালুর সমতল কাজ চলছে। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এখানে মোট চার লাখ ইট ব্যবহার করা হবে। এসব ইট আসছে ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বয়ংক্রিয় ইটভাটা থেকে।
সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আজ বুধবার ট্রেনে ভৈরবে এসে সড়কপথে সরাইল বিশ্বরোডে পৌঁছে মহাসড়কের ভাঙন, যানজট এলাকা ও মেরামতকাজ পরিদর্শন করবেন।
উল্লেখ্য, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প শুরু হয় আট বছর আগে। ৫,৭৯১ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু থেকেই ধীরগতির ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতীয় ঋণনির্ভর এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর তারা ফিরে এলেও অনেক নির্মাণসামগ্রী ততদিনে নষ্ট বা খোয়া যায়।
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা তিন স্তরের ইট বিছানোর কাজ করছি।”
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, “নতুন বরাদ্দ পাওয়া গেছে, কিছু জটিলতার সমাধান হয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।”
তবে সওজের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটি কোনো সাময়িক সংস্কার নয়, বড় ধরনের কাজ। নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলাম, এখন কাজ হাতে নিয়েছি।”
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর