• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৭ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৫৩ বিকাল

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পরিচয়ের নেপথ্যে সিন্ডিকেট: কাগজে ভাই-বোন, বাস্তবে স্বামী-স্ত্রী

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

একই বাড়ির ছাদে থাকেন জুবায়ের আর সামিনা। প্রতিবেশীরা জানে তারা স্বামী-স্ত্রী। একসঙ্গে সংসার করেন বহু বছর ধরে। কিন্তু সরকারি কাগজ খুলে দেখলে চোখ কপালে উঠবে– ওই কাগজে তারা ভাই-বোন। শুধু জুবায়ের বা সামিনা নন, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর অলিগলিতে ঘুরে দেখলে এমন অদ্ভুত কাহিনি মিলবে ডজন ডজন। রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত এসব মানুষ ঘুষ ও দালালচক্রের সহায়তায় জাল জন্মসনদ, এনআইডি, এমনকি পাসপোর্ট পর্যন্ত বানিয়ে নিয়েছেন খাঁটি ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে।

প্রশাসন সব জানে, দেখে– কিন্তু মুখ খোলে না। কারণ, এই জাল পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে মাদক, মানবপাচার আর ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক প্রভাবের এক গোপন সিন্ডিকেট।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী দালালদের সহায়তায় গড়ে উঠেছে পরিচয় জালিয়াতির বিশাল নেটওয়ার্ক, যা এখন তদন্তের টেবিলে নির্বাচন কমিশন ও দুদকের সামনে।

দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর বাসিন্দা জুবায়ের ও সামিনা দম্পতি এরই উদাহরণ। স্থানীয়দের চোখে তারা স্বামী-স্ত্রী; কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা আপন ভাইবোন। মৃত আহমদ আলীর ছেলে জুবায়ের শ্বশুর মোহাম্মদ আলী ও শাশুড়ি মনিকরা বেগমের নাম নিজের বাবা-মা হিসেবে ব্যবহার করে নাগরিক পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন (এনআইডি নং ১৯২৬৬৫৫২৬৫)। তার ছোট ভাই আমানও একই কৌশলে শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মা বানিয়ে ভোটার হয়েছেন।

জুবায়েরের ভাষ্য, ছোটবেলা থেকে জন্মদাতা বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। যাদের কাছে মানুষ হয়েছি, তাদের নামেই আইডি করেছি। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি ভিন্ন– জুবায়ের ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত। তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে মানবিক কারণে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তারা স্থানীয় পরিচয়ে মিশে গেছেন।

একই এলাকায় আরেক দম্পতি আমজাদ হোসেন ও ছেনুয়ারা বেগমও এনআইডিতে ভাইবোন পরিচয়ে ভোটার হয়েছেন। ছেনুয়ারা তার শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা বানিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র নেন (এনআইডি ২২১৩০০০০০০৮৬)। পরে ২০২২ সালে তাদের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ভোটার হয়েছেন।

যদিও আমজাদ দাবি করেন, ‘আমার স্ত্রী ছোটবেলায় বাবা-মা হারিয়েছে, তাই আমার বাবা-মায়ের নামেই আইডি হয়েছে।’ কিন্তু স্থানীয় সূত্র বলছে, ছেনুয়ারার প্রকৃত মা এখনো জীবিত এবং ওই এলাকাতেই বসবাস করছেন।

দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার রোহিঙ্গা দম্পতি বান্টু ও ছেনুয়ারার ছেলে মোহাম্মদ মুন্না, শহরের বাসিন্দা হোসনে আরা ও তার ভাই হোসেন আজাদ– সবাই একই ফাঁদে। কেউ শ্বশুর-শাশুড়ি, কেউ ভাই-ভাবীকে বাবা-মা বানিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হাতিয়ে নিয়েছেন।

রোহিঙ্গা পরিবারের কৌশল এখানেই থেমে নেই। ২০০২ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আবুল কালাম ও মুছানা খাতুন পরিবারসহ এখন ঢাকার গুলশান এলাকায় ভোটার। অথচ তাদের পুরো পরিবার এক যুগ ধরে কক্সবাজার শহরে বসবাস করছে। এমনকি তাঁদের সন্তানরা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রিসোর্টে কর্মরত।

এদিকে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রিনা আক্তার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভোটার হয়েছেন (এনআইডি ২২১২৭৭৫২৯৮৪১)। বিষয়টি জানাজানি হলে গোয়েন্দা সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

স্থানীয় সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিক বানানোর মূল খেলোয়াড় হচ্ছেন কিছু কাউন্সিলর ও দালাল। দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী জনকল্যাণ সোসাইটির সভাপতি হোসাইন আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বহু রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে। এদের সনাক্ত করা, প্রত্যয়ন দেওয়া– সব কিছুই জনপ্রতিনিধিরাই করেছেন।’

তবে তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু দায় এড়িয়ে বলেন, ‘নাম শুনে মনে করতে পারছি না। হয়তো সামনাসামনি দেখলে চিনতাম।’

অন্যদিকে নারী কাউন্সিলর ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘তালিকার দুই-তৃতীয়াংশ লোক রোহিঙ্গা– এটা সত্যি। শুনানি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর আর হয়নি।’

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে দুটি অভিযোগপত্র আসে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও অক্টোবর মাসে। প্রথম চিঠিতে ৪৭ জন এবং দ্বিতীয় চিঠিতে ৩৩ জনের নাম ছিল। এই দুই তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও দুদক যৌথ তদন্তে নামে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল আলম বলেন, ‘দুটি তালিকা তদন্তের নির্দেশ আসে। প্রথম তালিকায় থাকা ৪৭ জনের তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। অনেকে ডকুমেন্ট দেয়নি, অনেককে খুঁজেও পাইনি। পরে সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় কমিটি আর যোগাযোগ করেনি।’

দ্বিতীয় তালিকায় থাকা ২৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্তে ‘যথাযথ কাগজপত্র না থাকা’র প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ইতিমধ্যে ইসিতে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার শহরের ৪ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে এখনো সক্রিয় এই জাল এনআইডি চক্র। প্রশাসনিক সূত্র বলছে, নাম-ঠিকানা পাল্টে বা আত্মীয় সেজে নাগরিকত্ব পাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কয়েক শ। অথচ এক বছরের তদন্তেও প্রকাশ পায়নি কোনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন।

এলাকাবাসীর ভাষায়, রোহিঙ্গারা এখন আমাদেরই মতো– তফাত শুধু কাগজে। আর সেই কাগজটাই আজ কক্সবাজারের পরিচয় সংকটের সবচেয়ে বড় প্রতীক।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com