
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কয়েকদিনের মধ্যে গাজায় অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাবি। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ সাংবাদিক চলমান যুদ্ধ নিয়ে তার ভিডিও কভারেজের জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিলেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরপরই গাজায় ফিরতে শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা। ওই রাতের অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে প্রেস লেখা জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তিকে চিৎকার করে বলতে দেখা যায়, ‘যাদের কাছে ইন্টারনেট নেই, তাদের আমরা জানাচ্ছি, যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’
পরে জানা যায়, তিনিই ছিলেন সাংবাদিক সালেহ আল জাফারাবি।
ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা আরবি জানিয়েছে, গাজা শহরের সাবরা এলাকায় ‘সশস্ত্র মিলিশিয়ার’ গুলিতে আলজাফারাবি নিহত হন। তিনি গতকাল রোববার সকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
আল-জাজিরার সানাদ সংস্থা বিভিন্ন প্রতিবেদন ও অ্যাকটিভিস্টদের প্রকাশিত ফুটেজ যাচাই করে এর সত্যতা পেয়েছে। ‘প্রেস’ লেখা ফ্ল্যাক জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় একটি ট্রাকে তার মরদেহ দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো আরও জানায়, সংঘর্ষটি হামাস নিরাপত্তা বাহিনী এবং দগমুশ গোত্রের যোদ্ধাদের মধ্যে চলছিল। যদিও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এটি নিশ্চিত করেনি।
তবে গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল-জাজিরা আরবিকে জানিয়েছেন, গাজা শহরে এই সংঘর্ষটি (ইসরায়েলি) দখলদারির সঙ্গে যুক্ত একটি সশস্ত্র মিলিশিয়াক ঘিরে ঘটেছিল।
ওই সূত্র দাবি করে, নিরাপত্তা বাহিনী মিলিশিয়ার সদস্যদের অবরুদ্ধ করেছে এবং মিলিশিয়া সদস্যরা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দক্ষিণ গাজা থেকে গাজা শহরে ফেরা বাস্তুচ্যুতদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।
সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বারবার সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
গত জানুয়ারিতে যখন সাময়িক যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল, তার কয়েক দিন আগে আল-জাজিরার সঙ্গে আলাপকালে সাংবাদিক আলজাফারাবি গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘এই ৪৬৭ দিনের মধ্যে আমি যেসব দৃশ্য ও পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি, তা আমার স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। আমরা যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, তা আমরা কখনোই ভুলতে পারব না।’
এই সাংবাদিক আরও জানান, তার কাজের কারণে ইসরায়েলের দিক থেকে তিনি অসংখ্য হুমকি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি প্রতি মুহূর্তে ভয়ে থাকতাম, বিশেষ করে ইসরায়েলি দখলদারির আমার সম্পর্কে যা বলছিল তা শোনার পর। আমি প্রতি সেকেন্ডে বেঁচে ছিলাম, কিন্তু জানতাম না পরের সেকেন্ডটি আমার জন্য কী নিয়ে আসবে।’
সাংবাদিকদের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘাত। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ২৭০ জনেরও বেশি গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছেন।
আলজাফারাবির মৃত্যু এমন এক সময়ে ঘটল যখন গাজায় বর্তমান যুদ্ধবিরতি তৃতীয় দিনের মতো কার্যকর রয়েছে এবং প্রত্যাশিত জিম্মি-বন্দী বিনিময়ের প্রক্রিয়া চলছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর