
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় করলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। করলা চাষ করে অনেক কৃষক নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। করলাতে ভিটামিন এ ও সি, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রন বিদ্যমান। এছাড়াও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, মেদ দূর করে, রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং যকৃৎ ভালো রাখে।
ক্ষেতলাল উপজেলার প্রধান ফসল ধান ও আলু হলেও, কৃষকরা স্বল্প সময়ে আর্থিক ভাবে অধিক লাভবান হওয়ার কৌশল রপ্ত করেছেন। তাই প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে নিজস্ব মেধা ও প্রযুক্তিতে করলা চাষ করে এলাকার কয়েকশ কৃষক তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। এর ফলে ধান ও আলুর স্থান দখল করে নিয়েছে করলা। ধানের মাঠে বিঘার পর বিঘা জমিতে ঝাংলা পদ্ধতিতে লাগানো সবুজ করলা এখন দোল খাচ্ছে, আর এর সাথে দোল খাচ্ছে কৃষকদের মনও। এই দৃশ্য দেখা যায় ক্ষেতলাল উপজেলার হাটশহর, বাখরা, মুনঝাড়সহ কলিঙ্গা, ঘুঘোইল, কুসুমশহর, আঁটিদাশড়া, কোনিয়াপাড়া গ্রামের মাঠগুলোতে। একসময় এখানকার দু-এক জন কৃষক করলা চাষ করলেও, এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারই কোনো না কোনোভাবে করলা চাষের সঙ্গে যুক্ত। এই গ্রামগুলো এখন 'করলা গ্রাম' নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায়, স্বল্প সময়ে এই ফসল তোলা যায় বলে তারা করলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশা, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকদের প্রশিক্ষিত করা গেলে অধিক উৎপাদনের পাশাপাশি করলা চাষে আরও সফলতা আসবে।
কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলেছেন। এখানকার উৎপাদিত করলা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা এই গ্রামগুলোতে করলা কিনতে আসেন। করলা চাষে অধিক লাভবান হওয়ায় একদিকে যেমন কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে, অন্যদিকে দিনমজুরদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানকার করলা উন্নত জাতের হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট পাঠানো হয়ে থাকে। এখানকার করলা গুণগত মানেও বেশ ভালো হওয়ায় অন্য জেলায় এর চাহিদা অনেক বেশি। আর এ কারণে ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন। এসব করলা বাজারজাত করতে স্থানীয়ভাবে কয়েকটি স্থানে করলার হাট গড়ে উঠেছে।
ক্ষেতলাল উপজেলার হাটশহর গ্রামের কৃষক মোফাজ্জল ও ছানোয়ার হোসেন জানান, তুলনামূলকভাবে অন্য ফসলের চেয়ে করলার ফলন বেশি হয়ে থাকে। এতে সেচ খরচ কম, তেমনি রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। উপজেলার মুনঝাড় গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, একসময় অভাবের কারণে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটলেও করলা চাষে সফলতা আসায় এখন তারা অনেকটাই স্বাবলম্বী। বীজ, জৈবসার, বালাইনাশক, করলার মাচাসহ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে করলা চাষ করতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত করলা বিক্রি করছেন কৃষকরা।
ক্ষেতলাল উপজেলার কলিঙ্গা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম, খালেকুজ্জামান, সহর আলী জানান, করলার বীজ রোপণের ২ মাসের মধ্যে করলা তোলা শুরু হয়। একটানা ৫ মাস করলা তোলা যায়। ঔষধি ও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ করলার চাহিদা সারা বছরই থাকে। অন্য ফসলের চেয়ে করলা চাষে লাভ বেশি। আর সে কারণেই কৃষকরা করলা চাষে ঝুঁকছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি করলা প্রকারভেদে ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, উপজেলায় এবার করলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় করলা চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই উপজেলায়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর