
নোয়াখালীতে চাঁদাবাজি মামলায় আবদুল কাদের জসিম নামে এক বিএনপি নেতার জামিন পুনরায় নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ সময় আসামির অনুসারীরা আদালত চত্বরে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিনের ওপর হামলার চেষ্টা করে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বাংলানিউজ ও বিডি২৪লাইভের জেলা প্রতিনিধিদের কাজেও বাধা দেয় আসামির অনুসারীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ ড. মোরশেদ ইমতিয়াজের আদালত শুনানি শেষে আসামিকে পুনরায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুরের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় আসামি পক্ষের অনুসারীরা তাঁর ওপর চড়াও হয় এবং সংবাদ সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, আসামির জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় তাঁর অনুসারী সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। এ সময় আমি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গেলে তারা সাংবাদিকদের কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
তিনি আরও বলেন, কবিরহাট উপজেলার সৌদি প্রবাসী ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর আসামিরা আদালতে হাজির না হলে বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরবর্তীতে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেয়। গত ৫ অক্টোবর তারা নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে পিবিআইয়ের তদন্ত সাপেক্ষে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর আসামি পক্ষ পুনরায় জামিন আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে আসামিদের পুনরায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা যায়, মামলার আসামি আবদুল কাদের জসিম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নে সৌদি প্রবাসী মহি উদ্দিনের পরিবারের কাছে প্রভাব খাটিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জসিম। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় প্রবাসী মহি উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে গত ১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতা জসিমের দুই সহযোগী প্রবাসীর বাড়ি থেকে চাঁদাবাজির ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই টাকা গ্রহণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে ভুক্তভোগী পরিবার।
এরপর বিএনপি নেতা জসিম বাকি ৮০ হাজার টাকা তাঁর সহযোগীদের দিতে প্রবাসী পরিবারকে মুঠোফোনে চাপ প্রয়োগ করেন। গত ৭ মার্চ বিএনপি নেতা জসিমের চাঁদাবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা বিএনপি তাঁকে বাটইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। পরে এ ঘটনায় প্রবাসী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, বিএনপি নেতা জসিম ও তাঁর সহযোগী সহিদ উল্যাহ সুজন এবং জাহাঙ্গীর আলম পরস্পর যোগসাজশে জোরপূর্বক টাকা গ্রহণ, প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান, চাঁদা দাবি এবং দাবিকৃত চাঁদা আদায়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জসিমকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ স্বাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে কোনো তদন্ত ছাড়াই জসিমের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর ছোট ভাই এডভোকেট জামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আসামি জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় কারাগারে বসে তাঁর অনুসারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করছে, এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। এতে পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো কোনো ধরনের অর্থশক্তির প্রভাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, তদন্ত করা হয়নি, তবে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুরোধে বিএনপি নেতা জসিমের অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়। তবে তাঁকে বিচারক একটি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর