বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর এলাকায় ২০০২ সালে একটি ২০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান সে বছর ৮ মার্চ এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
পরবর্তীতে, ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ডা: জিয়াউল হক মোল্লা হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুসঙ্গিক খাতে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা সিএমএমইউ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে। এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটি ২০ বছরেও চালু না হওয়ায় এলাকাবাসী কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
স্থানীয়রা এই হাসপাতালের দুরবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলকেই দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য বিএনপি সরকার আমলে জনবল নিয়োগ না দিয়েই তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। অপরদিকে, বিএনপি সরকারের প্রকল্প হওয়ায় দলীয় সংকীর্ণতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে আর চালু করেনি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিজরুল বাজারে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশেপাশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ কারণে পৌর এলাকায় একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের দাবি ওঠে। এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিএনপি সরকার আমলে পৌর এলাকায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
নন্দীগ্রামের ২০ শয্যার হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হাসপাতালের চারটি ভবন দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকায় ফাটল ধরেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরা জরাজীর্ণ হাসপাতালের লোহার গ্রিল, জানালা, দরজা ও কাচের গ্লাস ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় হাসপাতালে মূল্যবান আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া, হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ বেশিরভাগ কক্ষেই তালা ঝুলছে।
বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডা: দিগন্তময় সরকার চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি জানান, তার কর্মস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বর্তমানে এখানে মেডিকেল অফিসার না থাকায় তাকে বহির্বিভাগের রোগী দেখার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই, তবে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এখন এখানে ওষুধ নেই। তিনি জানান, রোগীরা যতক্ষণ থাকে, তিনি ততক্ষণ এখানে থাকেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের গর্ভবতী সোনিয়া খাতুন, কলেজপাড়ার জাহেরা বেগম ও ফোকপাল গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, এখান থেকে শুধু ওষুধ লিখে দেওয়া হয়। বড় কোনো সমস্যার সমাধান এখানে হয় না। ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জরুরি ভিত্তিতে ২০ শয্যা হাসপাতালের সকল কার্যক্রম চালুর দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল বলেন, জনবলের অভাবে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। ২০ শয্যার এই অত্যাধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকা, চিকিৎসা সহকারী, ঔষধবিদ, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাটেনডেন্টসহ ১৩টি পদ রয়েছে। বর্তমানে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে হাসপাতালের আউটডোর চালু রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা: জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নন্দীগ্রাম সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এজন্য নন্দীগ্রামসহ আশপাশের মানুষের চিকিৎসাসেবার কথা চিন্তা করে একটি বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে ২০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে এই হাসপাতালের দিকে আর কেউ নজর দেয়নি। দেশনায়ক তারেক রহমান হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি হাসপাতালটি উদ্বোধন করেছিলেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর