গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে নুইয়ে পড়েছে আমন ধান গাছ, ক্ষেতে জমেছে পানি। বাদ যায়নি আলুসহ অন্যান্য সবজি ক্ষেতও। ফসল ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে হঠাৎ এমন বৈরী আবহাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।
গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাত থেকে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়। ক্রমেই তা ভারি বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হতে থাকে। গত চার দিনে জেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বৃষ্টিপাতে আলুর খেত, ধানের খেত ও সবজির খেতে পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও মাঠের পাকা ধান হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় কৃষক আগাম জাতের আমন ধান কেটে শুকানোর জন্য রাখা জমিতেও পানি জমে যাওয়ায় কর্তিত ধান শুকানোর পরিবর্তে ভিজে একাকার হয়েছে। ক্ষেতে জমে থাকা পানির কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণও বাড়ছে।
রাণীশংকৈল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলি জমিতে পানি জমেছে রোপা আমন জমিতে ১৩০ হেক্টর জমিতে, আলু জমিতে ২০ হেক্টর এবং শাকসবজিসহ অন্যান্য জমিতে ২০ হেক্টরের বেশি জমিতে।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় মোট ২১ হাজার ৬৫৫ হেক্টরে আমনের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০৮৫ হেক্টর জমির আধা কাঁচা ও পাকা ধান এখন মাঠে।
উপজেলার ভরনিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক পর ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল।কিন্তু অসময়ে বৈরী আবহাওয়ায় গত কয়েক দিনের হালকা -মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে জমির আধাপাকা ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সূর্যের দেখা না পেলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষি আফজাল হোসেন জানান, ফুলকপি ও বাধাকপির ক্ষেত এখন পুকুর হয়ে গেছে। এই আগাম সবজিই আমাদের ভরসা। এভাবে পানি জমে থাকলে সব পচে যাবে।
রাতোর এলাকার কৃষক শচীন রায় বলেন, ‘যেসব ধান গাছ পানির নিচে নুয়ে পড়েছে, তা থেকে আর ধান পাওয়া যাবে না। সেগুলো কেটে গরুকে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর যে গাছগুলো কোনোমতো দাঁড়িয়ে আছে, তা থেকে কিছুটা ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু সে ধানের রং ও ফলন ভালো হবে না। আর এসব ধান বাজারে বিক্রি করে তেমন দাম পাওয়া যাবে না।’
উপজেলার আরও কৃষকেরা জানান, ‘যারা আগাম আলু রোপণ করেছিলেন, তাদের আলুর খেতে পানি জমে আলু নষ্ট হওয়ার পথে। গত বছর আলু চাষ করে আমরা অনেক লোকসানে পড়েছি। এবারও অনেক কৃষক বেশি দামে সার সংগ্রহ করে এক সপ্তাহ পূর্বে আলু রোপণ করেছেন। কিন্তু আলুর খেতে এখন পানি জমে আছে। এ কারণে আলু বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে জমির ধান ইতোমধ্যে পেকে গেছে। অনেকেই পাঁচ ছয় ’দিন আগেও ধান কেটে শুকানোর জন্য মাঠে রেখেছিলেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে আমন খেতে কর্তিত ধান এখন পানিতে ভিজে নষ্ট হতে বসেছে।
কাতিহার এলাকার কৃষক গোবিন্দ পাল বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান সবেমাত্র পাকতে শুরু করেছে। আবার কিছু কিছু ধানে শিষ পোক্ত হয়ে সোনালী রং এসেছিল। সপ্তাহ দুয়েক পর ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ করে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়। টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ধানগাছ নুইয়ে পড়ায় পানির নিচে জমে থাকা ধান পচে যাবে।’
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুততার সাথে জমিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আলুর ক্ষেতের পানি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে, না হলে বীজ আলু পচে যাবে। ধান হেলে পড়লেও যেন ফলন কিছুটা রক্ষা করা যায়, সে জন্য কৃষকদের করণীয় সম্পর্কেও আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। এখনো পর্যন্ত ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি তবে কাজ চলছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর