গাজীপুর সদর উপজেলায় বাক প্রতিবন্ধী বিধবা এক নারীর নামে বরাদ্দকৃত সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর স্থানীয় এক বিএনপি নেতা কৌশলে অন্য এক পরিবারকে থাকার জন্য দিয়েছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই বাক প্রতিবন্ধী বিধবা নারী আশ্রয়হীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এতে ওই এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গৃহহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য—ভূমিহীন, অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া। কিন্তু সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের বর্তাপাড়া এলাকায় সেই প্রকল্পের ঘর নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ।
স্থানীয়রা বলছেন, মানবিকতার নামে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের ঘর কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
গত শনিবার (৮ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তাপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৭ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন ফুলজানু (৩৫) নামে এক বাক প্রতিবন্ধী বিধবা নারী। কিন্তু ঘরটিতে বর্তমানে বসবাস করছেন ইউসুব আলী, তার ছেলে রবিন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
ইউসুব আলী বলেন, আমাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই। বিএনপি নেতা সামাদ ব্যাপারি ফুলজানুর আত্মীয় কবির মাস্টারের মাধ্যমে আমাদের এখানে থাকতে বলেছেন।
ফুলজানুর ভাতিজা কবির মাস্টার বলেন, ইউসুব আলীসহ তার পরিবার আমার কাছে এসেছিল, কিন্তু আমি ঘর দেইনি। বলেছিলাম, নিয়ম অনুযায়ী সরকার অনুমতি দিলে থাকুক। তবে সামাদ ব্যাপারি তাদেরকে কীভাবে থাকতে দিয়েছে, তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য সামাদ ব্যাপারি বলেন, আমি কাউকে বের করে অন্য কাউকে থাকতে দিইনি। ইউসুব আলী বহু বছর ধরে ভাড়া থাকে, তাদের নিজস্ব ঘর নেই। ফুলজানুর ঘরটি তিন বছর ধরে খালি ছিল, তাই বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার সংযোগ কেটে দেয়। মানবিক বিবেচনায় ফুলজানুর আত্মীয় কবির মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে তাদের থাকতে বলা হয়েছে। তবে ফুলজানু আসলে তারা ঘর ছেড়ে দেবে।
কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, সামাদ ব্যাপারি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সম্পত্তি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছেন। বাক প্রতিবন্ধী ফুলজানু কথা বলতে পারেন না। কয়েক বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র মেয়েরও বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন একা। তার দেখভাল করছেন ভাতিজা কবির মাস্টার। এখন ঘর হারিয়ে ফুলজানুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
ভুক্তভোগী ফুলজানুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ইশারায় বোঝান, আমার ঘরে অন্য লোক থাকে, আমি ঢুকতে পারি না।
ফুলজানুর প্রতিবেশীরা বলেন, সরকার অসহায়দের ঘর দিয়েছে। সেই হিসেবে বাক প্রতিবন্ধী বিধবা ফুলজানু একটি ঘর পেয়েছিল। কিন্তু এখন সেখানে তিনি থাকতে পারছেন না। প্রতিবন্ধী মহিলার ঘর কেড়ে নেওয়া শুধু অনিয়ম নয়, এটি অমানবিকও।
তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের মতে, মানবিক কারণ দেখিয়ে হলেও এভাবে কাউকে সরকারি ঘরে থাকতে দেওয়া বেআইনি। কারণ সরকারি ঘরের বরাদ্দ পরিবর্তন বা হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রশাসনের বাইরে কারও নেই। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যদি এভাবে দখল করতে থাকে, তাহলে সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, এভাবে একজনের ঘর আরেকজনকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর