পছন্দের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়নি পরিবার। যার সঙ্গে পরিবার বিয়ে করিয়েছে সেই স্ত্রীর সঙ্গে রয়েছে ভাই ও বাবার অবৈধ সম্পর্ক।
একপর্যায়ে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। তবে এত কিছু মেনে নিতে পারেনি ফারুক। তাই বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করতেই বাবাকে নিয়ে কাজের সন্ধানে দূরদেশে আসেন ফারুক। পরে রাতের বেলা তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে বাবা মোবাইল ফোনে কথা বলা শেষে ঘুমিয়ে পড়লে কোদাল দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে তাকে।
গ্রেপ্তারের পর সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে মাদারীপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে হাজির করা হলে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিতে এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন বাবাকে হত্যাকারী ছেলে মো. ফারুক (২৭)। রাত ১০টার দিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম। নিহত মতিউর ইসলাম চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানার হারিয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মতিউর ও তার ছেলে ফারুক কাজের সন্ধানে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের পঞ্চগ্রামে এসে রসুন বপনের কাজ নেয়। রোববার রাতের বেলা বাবা-ছেলে খাবার শেষে এক সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে যায়।
রাত ১০টার পর বিছানায় শুয়ে সাবেক পুত্রবধূর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বাবা মতিউর। এসময় পাশের ঘরে বসে সিগারেট খাচ্ছিল ফারুক। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত বাবাকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে ফারুক। মাত্র আড়াই মিনিটে সর্বমোট ১৭টি কোপ দেয়। মতিউরের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার লাশের পাশে বসেই সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে ফারুক।
তিনি আরও জানান, শব্দ পেয়ে পাশের ঘর থেকে বাড়ির মালিকের ছেলে ও আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং মতিউরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় ফারুককে চুপ করে বসে থাকতে দেখে বাড়ির মালিক শিবচর থানায় ফোন দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক ছেলেকে আটক করে।
একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোদাল, ফারুকের রক্তাক্ত জামা-কাপড়সহ অন্যান্য আলামত জব্দ করে পুলিশ। মরদেহটি সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় মতিউরের স্ত্রী কোহিনূর বেগম বাদী হয়ে তার ছেলেকে আসামি করে শিবচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সোমবার বিকেলে গ্রেপ্তার ফারুককে মাদারীপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে হাজির করা হলে তার বাবা মতিউরকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ বিচারকের নিকট ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেওয়া শেষে ফারুককে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবাকে হত্যার জন্য আগে থেকেই পাশের রুমে একটি কোদাল লুকিয়ে রেখেছিল ফারুক। অপেক্ষায় ছিল কখন তার বাবা ঘুমাতে যাবে সেই সুযোগের।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর