কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। খেজুর গাছের রস ও গুড় আমাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ। শীতের সকালে খেজুরের রস, রসের পিঠা, গুড়-মুড়ি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য।
আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের এটাই সেরা সময়। দিন দিন কমছে খেজুর গাছ। নড়াইলের কালিয়ায় খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা-পুলি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছের সংখ্যা কমে গেছে, গাছির অভাবও প্রকট। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে এই চিরচেনা শীতের রসনাবিলাসী সংস্কৃতি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজারে খেজুরের পাটালি ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই স্থানীয়ভাবে খেজুর রস ও গুড় এখনো জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য হিসেবে টিকে আছে।
এই ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে স্থানীয় সাংবাদিক মো. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি রাজশাহী থেকে তিনজন অভিজ্ঞ গাছি এনে কালিয়া এলাকায় স্থানীয়দের পুনরায় খেজুর গাছ কাটা ও রস সংগ্রহে উৎসাহিত করছেন। ইতোমধ্যে তাদের হাতের কারুকাজে এলাকার খেজুর গাছে রস আসতে শুরু করেছে। বিষয়টি জানার পর কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় গাছিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
রাজশাহী থেকে আসা গাছি আজিজুর রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘চার বছর আগে লোহাগড়ার লাহুড়িয়ায় খেজুর গাছ কাটতে এসে সাংবাদিক খাইরুল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার মহাজন গ্রামে এসেছি। গাছের মালিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে নড়াগাতী থানার মহাজন উত্তরপাড়া ও কাঠাদুরা গ্রামে প্রায় ২০০ খেজুর গাছ কেটেছি। আমাদের ইচ্ছা, এলাকার মানুষকে খাঁটি খেজুর রস ও গুড় খাওয়ানো।,
গাছ মালিক আলেক ইসলাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আগে আমার খেজুর গাছ গুলো গাছির অভাবে কাটাতে পারতাম না। সাংবাদিক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে গাছিদের গাছ কাটতে বলি। এতে আমরা রস ও গুড় খেতে পারবো। গাছের জন্য টাকাও পাবো।,
উপজেলার কাঠাদুরা গ্রামের মেহেদি হাসান তুষার বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘একসময় কালিয়ায় খেজুর রসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে, তেমনি গাছিও নেই বললেই চলে। সাংবাদিক খাইরুল ভাইয়ের এই উদ্যোগে আমরা নতুন আশার আলো দেখছি।,
সাংবাদিক খাইরুল চৌধুরী বিডি২৪লাইভকে বলেন,‘একসময় আমার বাড়ির উঠানে খেজুর গাছ ছিল। গাছিরা এসে গাছ কাটত, আমরা খাঁটি খেজুরের রস ও গুড়ের তৈরি পিঠা খেতাম। এখন গাছিও নেই, গাছও নেই। তাই হারিয়ে যাওয়া সেই অতীত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই আমার এই উদ্যোগ। আগামীতে চারা রোপণসহ এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।,
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘খেজুর রস ও গুড় আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাংবাদিকের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে স্থানীয় গাছিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা আবারও এই পেশায় আগ্রহী হয়।,
তিনি আরও বলেন, ‘শীতের মৌসুমেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে কালিয়া উপজেলায় আবারও শীতের সকাল ভরবে খেজুর রস ও পিঠা-পুলির ঘ্রাণে। এতে শুধু ঐতিহ্যই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিও হবে চাঙ্গা, আর গ্রামীণ জীবিকায় আসবে নতুন সম্ভাবনা।,
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রাশেদুজ্জামান বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতির শেকড়। আধুনিকতার ভিড়ে এসব ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
উদ্যোগের মাধ্যমে খেজুর রস, মৃৎশিল্পসহ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলোকে আবারও জীবন্ত করে তুলতে হবে। যাতে নতুন প্রজন্ম সংস্কৃতির এই গর্বকে জানতে ও ধারণ করতে পারে।,
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর