লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় টিসিবি কার্ড করে দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ এবং সেই টাকা ফেরত চাওয়ার জেরে গ্রাম পুলিশের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মা-ছেলেসহ তিনজন আহত হয়। আহতদের প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকা জনক। হামলার পর থেকেই আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ভুক্তভোগী পরিবার তীব্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আহতদের পরিবার।
গত ১২ নভেম্বর (রবিবার) সকালের দিকে জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধুপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চার মাস আগে সারপুকুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেন টিসিবি কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নেন। কার্ড না হওয়ায় টাকা ফেরতের জন্য বারবার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও আরিফ হোসেন তা দিতে টালবাহানা করছিলেন।
পরে গত ১২ নভেম্বর সকালে হাফিজুল ইসলামের ছোট ভাই মোঃ সিরাজুল ইসলাম আরিফ হোসেনের কাছে টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আরিফ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে সিরাজুলকে মারধর করেন। এর কিছুক্ষণ পর, সকাল ৯টার দিকে, গ্রাম পুলিশ আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে নবিয়ার রহমান, লোকমান আলী, সবুজ মিয়া, বদিয়ার রহমান, আব্দুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম, মর্জিনা বেগম ও মঞ্জিলা বেগমসহ প্রায় ১০–১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠি, লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সিরাজুলের বাড়িতে হামলা চালায়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে হামলাকারীরা সিরাজুলকে ঘর থেকে টেনে বের করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত হয় সিরাজুল। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার মা হামিদা বেগমকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, শ্লীলতাহানি করা হয় এবং তার স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আহতদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
এ বিষয়ে আজ(১৭ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে আহত সিরাজুলের বড় ভাই মোঃ হাফিজুল ইসলাম বলেন, হামলার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও আসামিরা প্রকাশ্যে চলাচল ও এখনো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঘুরছে এবং আমাদের পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও সুবিচার চাই। তিনি জানান, আহতদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেই এজাহার দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেন হামলার দায় অস্বীকার করে বলেন, আমি টাকা নিইনি। উল্টো ওরাই আগে হামলা করেছে। আমি শুধু মারামারি থামাতে গিয়েছিলাম।
এ প্রসঙ্গে সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শুশিল চন্দ্র বলেন, গ্রাম পুলিশের টিসিবির টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর