ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক শহীদ মীর নিসার আলি তিতুমীরের ১৯৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি (সতিকসাস)। 'জুলাই ২৪'-কে প্রেক্ষাপট ধরে শহীদ তিতুমীরের সংগ্রাম স্মরণে বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সতিকসাসের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা শহীদ তিতুমীরের প্রকৃত বংশপরিচয়, তাঁর বহুমুখী প্রতিভা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর যথাযথ মূল্যায়নের অভাব নিয়ে আলোচনা করেন এবং ২৪-এর বিপ্লবীদের কাছে তাঁর আদর্শের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্য: মীর নয়, হাফেজে কোরআন তিতুমীর ছিলেন সাঈদ বংশের সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজ ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. টি. এম. যায়েদ হোসেন। তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের পাঠদান অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিতুমীরের বংশপরিচয় ও দক্ষতা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা নিরসন করেন।
তিনি আরও বলেন, "তিতুমীর মীর বংশের ছিলেন না; তাঁর বংশধররা দাবি করেন, তাঁরা সাঈদ বংশের। তিনি সাধারণ কোনো মানুষ ছিলেন না; তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফেজ এবং তৎকালীন সময়ের একজন দক্ষ লাঠিয়াল। শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, সারা দেশজুড়ে এই দিনে তাঁকে স্মরণ করা এবং তাঁর অবদান সামনে তুলে ধরা উচিত।"
প্রধান অতিথির বক্তব্য: তিতুমীর মানেই বিদ্রোহী নেতা, রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেট নেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সোসাইটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউনাইটেড নেশনস-এর আবুল কাশেম শেখ। তিনি তিতুমীরকে একজন বিদ্রোহী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরও বলেন, "শহীদ তিতুমীর ছিলেন বিদ্রোহী নেতা। তিনি ইংরেজ ও জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। আমি মনে করি, এখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই একেকজন তিতুমীর... আজ তাঁর স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলাদা বাজেট থাকার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। আপনাদের এই সাংবাদিক সমিতির সংগঠনকে আমি ইউনেস্কোর সাথে সমন্বয় করে দেব, যাতে ভবিষ্যতে বৃহত্তর পরিসরে আয়োজন করতে পারে।"
বিশেষ অতিথিদের আলোচনা: '২৪-এর আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণা তিতুমীর'আলোচনা সভায় ঢাকা-১৭ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. এস. এম. খালিদুজ্জামান বলেন, "ভারতবর্ষের মানুষের অধিকার আদায়ে প্রথম শহীদ তিতুমীর। তাঁর ইতিহাস আমাদের তরুণ প্রজন্মসহ সকলকে অনুপ্রেরণা দেয়। ২৪-এর আন্দোলন মূলত তিতুমীরের আন্দোলনেরই ধারক-বাহক। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর যথাযথ মর্যাদা ও আলোচনা আমরা দেখতে পাই না। যে কলেজ তাঁর নামে সেখানেও বড় কোনো আয়োজন করা হয়নি।"
অন্যান্য বক্তারা বলেন, তিতুমীরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে তাঁকে আড়াল করা হয়েছে। বক্তারা আরও বলেন, ২৪-এর আকাঙ্ক্ষার আলোকে বাংলাদেশ গড়তে হলে তিতুমীরের কাছে ফিরে যেতে হবে। তাঁর পথ অনুসরণ করেই ২৪-এর বিপ্লবীরা রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাই শহীদ তিতুমীরের সংগ্রাম, অবদান ও জীবনীকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ও স্মরণ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন;- আলোচনা সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এম. এম. আতিকুজ্জামান, সতিকসাসের শিক্ষক উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস মল্লিক, সতিকসাসের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও এশিয়ান টেলিভিশনের প্ল্যানিং এডিটর রফিকুল ইসলাম রলি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মানিক মুনতাসির এবং লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা শামিম হোসেন শিশির, তাওসীফ মাইমুন, সতিকসাসের সদস্যরা, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর