• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৬ ঘন্টা পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:২৮ রাত

প্রশাসনের নীরবতায় প্যারাবন উজাড়ের উৎসব, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের মহেশখালীর উপকূলজুড়ে হাজার হাজার একর প্যারাবন ধ্বংসের মহোৎসব চলছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও বেজা (বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি), উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে ঘটিভাঙ্গার পশ্চিম অংশে শত শত শ্রমিক এবং কয়েকটি স্কেভেটার ব্যবহার করে একদল ভূমিদস্যু দিনের আলোয় বাইন, কেওড়া ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বনজ গাছ কেটে প্যারাবন উজাড় করছে। কাটা জমিতে বালু ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়ি ঘের।

প্যারাবন ধ্বংসের এই ঘটনা শুধু জীববৈচিত্র্যের জন্যই নয়, উপকূলীয় দুর্যোগ- নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে বলে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা এলাকায় বড় মহেশখালীর জাগিরাঘোনা গ্রামের মাহামুদুল করিমের নেতৃত্বে কয়েকদিন ধরে চলেছে প্যারাবন কাটার বড় অভিযান।

এ ছাড়া আরও কয়েকজন মিলে একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তাদের মধ্যে আছেন, জাহাঙ্গীর আলম, মকবুল আহমেদের ছেলে তারেক, নুর আহমেদের ছেলে আব্দুল মান্নান, আলী আহমেদের ছেলে সজীব, আজিজুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা মহসীন আনোয়ারের পিএস আবুল হোসেন।

স্থানীয়রা জানান, এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই প্রায় ১০০ একর প্যারাবন উজাড় করা হয়েছে এবং আরও কয়েক একর কাটা হচ্ছে।

অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে সিন্ডিকেটে নাম থাকা আবুল হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে প্যারাবন কাটার আলোচনা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আমরা জড়াইনি। বরং যখন কাটা শুরু হয়, আমরা কিছু লোককে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার এই বক্তব্য নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যারাবন উজাড়ের ফলে ঝড়- জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। লবণাক্ততার মাত্রা বাড়বে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্প ঝুঁকিতে পড়বে এবং স্থানীয় মৎস্যসম্পদ ও প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হবে। মহেশখালীর ভৌগোলিক অবস্থান এমনিতেই দুর্যোগ- সংবেদনশীল। প্যারাবন ধ্বংস হলে পুরো দ্বীপবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বলে স্থানীয়দের সতর্কবার্তা।

তাদের মতে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পারস্পরিক দায় এড়ানো, নজরদারির অভাব এবং প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর দৌরাত্ম্যে যে পরিবেশ বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে, তা থামাতে এখনই জরুরি সমন্বিত উদ্যোগ। অন্যথায় মহেশখালীর উপকূল আরও দুর্বল হবে, আর বড় কোনো ঝড় হলে তার ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে পুরো দ্বীপবাসীকে।

মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আয়ুব আলী সরাসরি বলেন, জায়গাগুলো বেজার। তারা আমাদের বুঝিয়ে না দেওয়ায় আমরা সেখানে আইনগতভাবে অভিযান চালাতে পারি না। বেজা, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব ছিল ব্যবস্থা নেওয়ার। তারা চাইলে আমরা সহায়তা করতে পারি।

বনবিভাগের এমন ‘অসহায়ত্বের’ বক্তব্যে স্থানীয়রা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের দাবি- দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ‘নীরব সম্মতি’ ছাড়া এমন ব্যাপক উজাড় সম্ভব নয়।

কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, প্যারাবন কেটে ঘের করার বিষয়ে আমরা বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দস্যুরা আরও উৎসাহিত হয়েছে। সোজা কথা- প্রশাসনের নীরবতা এবং আইন প্রয়োগে গাফিলতির কারণেই প্যারাবন রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না।

সবুজ আন্দোলনের পরিবেশকর্মী মো. সজীব বলেন, মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলে একবার অভিযান হয়, আবার সব চুপচাপ। দায়িত্বহীনতা ও সুবিধাবাদী আচরণ না থাকলে প্যারাবন এভাবে কাটা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, এই প্যারাবন সুনামি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে পুরো মহেশখালীকে রক্ষা করে। এগুলো ধ্বংস হলে ক্ষতির মাত্রা হবে ভয়াবহ।

স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী নেতা জাকের হোসাইন বলেন, সমুদ্রের দিক থেকে আসা প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম প্রতিরোধক হলো সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গার প্যারাবন। এগুলো না থাকলে মহেশখালী ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে। রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক- যারা প্যারাবন নিধন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জরুরি। আমার দলের কাউকে জড়িত পাওয়া গেলে দলীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ঘটিভাঙ্গা ও সোনাদিয়ায় প্রতিনিয়ত প্যারাবন কাটার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। খুব দ্রুতই বড় একটি অভিযান চালানো হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে স্থানীয়দের মতে- প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলো এখন পর্যন্ত শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]