• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩৫ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০৫ দুপুর

যে মহাসড়কের প্রতি কিলোমিটারে যেন একটি করে বিপদ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

যে সড়কের প্রতিটি বাঁকেই যেন ওঁত পেতে আছে মৃত্যু। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এখন ঠিক এমন এক ভয়ংকর বাস্তবতার নাম। দেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজারে যাওয়ার পথ হওয়ায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াতে মুখর থাকে এই সড়ক।

কিন্তু সেই ব্যস্ততার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভয়, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা। সরু ও অপ্রশস্ত রাস্তা, পরপর বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, লবণাক্ততার কারণে পিচ্ছিল পিচ এবং অবৈধ তিনচাকার যানবাহনের উপদ্রব- সব মিলিয়ে এই মহাসড়ক পরিণত হয়েছে এক অনবরত মৃত্যুকূপে।

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই এখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ মানুষ; আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। প্রতিটি দুর্ঘটনার সাথে নিভে যাচ্ছে পরিবার, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার দাবি দিন দিন জোরালো হলেও, তার আগ পর্যন্ত এই পথে মানুষের যাত্রা যেন শুধু গন্তব্যে নয়, মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়া এক কঠিন সংগ্রাম।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই এই মহাসড়কে ১৫৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জন মানুষ; আহত হয়েছেন ৩৫১ জন। প্রশাসনের হিসাব- বছরের পর বছর ধরে এই সড়কে দুর্ঘটনার গ্রাফ শুধু উর্ধ্বমুখী।

কক্সবাজারের খুটাখালী এলাকার বাসিন্দা ফরিদ আহমদ প্রতিদিন এই মহাসড়ক ব্যবহার করেন। তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই অন্তত দুই- তিনটি দুর্ঘটনার খবর শুনি। বৃষ্টি আর শীতে কুয়াশা নামলে তো দুর্ঘটনা বাড়ে আরও বেশি। এই রাস্তায় বের হলে ঘরে ফিরে আসতে পারব কি না- এটার নিশ্চয়তা নেই।

ডুলহাজারার বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত বলেন, দুর্ঘটনার বড় কারণ তিন চাকার যানবাহনের দৌরাত্ম্য। বাংলাদেশের আর কোনো মহাসড়কে এত ইজিবাইক-সিএনজি দেখতে পাবেন না। এগুলোই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়। প্রশাসন জানে- তবুও সরাতে পারে না।

চকরিয়ার ইদ্রিস আলী বলেন, রাস্তা খুবই সরু, একটু পরপর বাঁক। তার ওপর লবণবোঝাই ট্রাক চলাচল অনেক বেশি। ট্রাক থেকে পানি পড়ে সড়ক পুরো পিচ্ছিল হয়ে থাকে। দুর্ঘটনা হবেই।

পরিবহন মালিক ও চালকদের দাবি, এই মহাসড়কের বর্তমান ধারণক্ষমতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ১৫০ কিলোমিটার সড়কের অনেক জায়গায় নেই কোনো মিডিয়াম ডিভাইডার। তাই সামান্য ভুলেই ঘটে মুখোমুখি সংঘর্ষ।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লবণবাহী ট্রাক চলাচলের সমস্যা। ট্রাকে ব্যবহৃত লবণ- পানিযুক্ত জল সড়কের উপর পড়ে রাস্তা অত্যন্ত পিচ্ছিল করে তোলে। এতে ব্রেক করলেই গাড়ি স্লিপ করে পড়ে।

বাসচালক সাইফ উদ্দিন জানান, কক্সবাজারে যাওয়ার গাড়ির সংখ্যা অনেক। রাস্তা ছোট, গতি বেশি- চাপটা সবসময় থাকে। তার ওপর তিন চাকার গাড়ি যেন নিয়ন্ত্রণহীন। এসব মিলিয়েই দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানায়, পুরো পথে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। আরও উদ্বেগজনক হলো- ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজির অবাধ চলাচল।

চকরিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আতিক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিষিদ্ধ গাড়ি চলছে, ফিটনেস নেই এমন গাড়ি চলছে, কিন্তু প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখছি না। রাস্তা বাঁকায় ভরা- তার ওপর পিচ্ছিল। এসব নিয়ে কোনো টেকসই ব্যবস্থা হয়নি আজও।

মালুমঘাট হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক জিয়া উদ্দিন জানান, এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ বেপরোয়া গতি। ৭০-৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চললেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিন চাকার যানবাহনের বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান চলছে।

স্থানীয়দের মতে, দৃশ্যমান পরিবর্তন খুব একটা নেই। কারণ সমস্যার মূল জায়গা সড়কের স্থাপনা ও নকশাগত ত্রুটি- যা শুধু অভিযান দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়।

কক্সবাজার বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, পর্যটন নগরী হওয়ায় কক্সবাজারমুখী গাড়ির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু মহাসড়কটি খুবই সরু। বর্তমান চাপ সামলানো সম্ভব নয়। ৪ থেকে ৬ লেনে উন্নীত করলে দুর্ঘটনা স্বাভাবিকভাবে কমে আসবে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, সাধারণ মানুষ।

বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে এই মহাসড়কে মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের, আহত হয়েছেন ৩৫১ জন।

স্থানীয়রা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরানো, লবণাক্ততা রোধে ব্যবস্থা, মিডিয়াম ডিভাইডার স্থাপন, তিন চাকার যানবাহন নিষিদ্ধকরণ এবং ফিটনেসহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া দুর্ঘটনা কমবে না।

মহাসড়ক উন্নীতকরণ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক সুনীল বড়ুয়া বলেন, এই মহাসড়ক এখন মৃত্যুর করিডোর। প্রতিদিন মানুষ মরছে, পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে- কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব এটি ৬ লেন করতে হবে। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী জানান, মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ফাইনাল রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মাসুম/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]