নোয়াখালী জেলায় বার্ষিক পরীক্ষার হলে নকলের চিরকুটসহ ধরা পড়ার পর বিদ্যালয়ের টয়লেট থেকে ফারহানা আক্তার মোহনা (১২) নামে এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সদর উপজেলার বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ফারহানা আক্তার মোহনা বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এবং উপজেলার পণ্ডিতপুর গ্রামের মো. ফরহাদ হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয় ও পুলিশ জানায়, সকালে বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় ফারহানার কাছ থেকে নকলের এক চিরকুট উদ্ধার করেন হল পরিদর্শক। পরে দুপুরে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটে ফারহানাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন শিক্ষার্থীরা। তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। তারা অভিযোগ করে বলেন, মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগারে কেন আসবে? মাধ্যমিক স্কুল ভবনে শৌচাগার রয়েছে। আর আত্মহত্যা করলে শৌচাগারের ভেতর থেকে লক লাগানো থাকার কথা। কিন্তু দরজার লক খোলা ছিল। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রী শৌচাগারের ছোট জানালার লোহার রেলিংয়ের সঙ্গে যদি ফাঁস দেয়, তাহলে তার উচ্চতা অনুযায়ী অসম্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তবে এই ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা, তা দ্রুত উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।
বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহফুজুল আকবর বলেন, পরীক্ষা সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরু হয়ে ১১টায় শেষ হয়। পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ফারহানাকে চিরকুট ব্যবহার করতে দেখে শুধুমাত্র চিরকুটটি নিয়ে নেন। খাতা জব্দ বা কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। মেয়েটি স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা শেষ করে হল থেকে বেরিয়ে যায়। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে শিক্ষকরাও ওয়াকিবহাল নন।
তবে সরেজমিনে বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালা লাগানো দেখা যায়। সহকারী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক মাইজদী কাজে আছেন।
মাইজদীতে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনকে থানায় পাওয়া যায়। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, জেলা শিক্ষা অফিসে তিনি কাজে এসেছিলেন। স্কুল থেকে ফোন দিয়ে বলতেছে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়েছে। তিনি বলেন, তাকে হাসপাতালে পাঠান আর অভিভাবককে খবর দেন। পরে তিনি নিজেই হাসপাতালে যান। স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় লোকজনও ছিলেন। তিনি যেটা শুনলেন, পরীক্ষার সময় ওই ছাত্রীটি নকল করছিল। হলে দায়িত্বরত শিক্ষক নকল নিয়ে তার যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ করেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর দু-এক জন ছাত্রী এসে স্যারদের জানায়, আপনাদের এক ছাত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশরুমে কান্নাকাটি করছে। পরে স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা গিয়ে দেখে দরজা লক করা ছিল না। গিয়ে দেখে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। ওদের চিৎকারের পর স্যাররা গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তিনি নিজেও হাসপাতালে যান, ডাক্তার তাকে মৃত বলেন। স্কুলের শিক্ষকরা ওই ছাত্রীকে যে অবস্থায় পেয়েছে, এটা আত্মহত্যা—এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। ভেতর থেকে দরজা আটকানো ছিল না বলেও জানান তিনি। একপর্যায়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা আত্মহত্যা বলেন, তাই তিনি মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সুধারাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তাকে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে জানান। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য নিতে গেলে তারা বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর