বগুড়া- ১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া কাজী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখলের মামলা করেছে এক ভুক্তভোগী। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম ও তার দুই বোনের মালিকানাধীন গুলশান ২ এর ১১৫ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাড়িটি দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ তাদের।
কাজী রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন কোম্পানী র্যান্স রিয়েল এস্টেট লিমিডেট ২০১০ সালে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ করা ১০ কোটি টাকার সাইনিং মানিও সঠিকভাবে পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি। বাড়ির নকশাও অনুমোদন করেনি তারা। এ নিয়ে ১৮৭বার লিখিত চিঠি দিয়ে প্রতিকার পায়নি খন্দকার মুজিবুর ও তার পরিবারের সদস্যরা। বাধ্য হয়ে চলতি বছর ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলা করেছেন এই ভুক্তভোগী পরিবার, মামলা নাম্বার ৪৮৬/২০২৫।
এ বিষয়ে উক্ত মামলার এডভোকেট শফিকুল ইসলাম বলেন, র্যান্স রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রফিকুল ইসলাম ও চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইদুর রহমান একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম নোমান সহ আরও প্রায় ১৮টি জমি এভাবে কৌশল করে দখল করে রেখেছে। এ বিষয়ে আমার মক্কেল আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন। আশা করি আদালত তাকে উপযুক্ত প্রতিকার দেবেন।
ভুক্তভোগী খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম নোমান বলেন, র্যান্স রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রফিকুল ইসলাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ৩ বছরের মধ্যে আমার ভবন ডেভেলপ করবেন। ১৬ বছরেও তা নির্মাণ করেনি, উল্টো ১৬ বছর ধরে আমার বাড়ি দখল করে রেখেছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাই। আমি এর প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো আমার বিরুদ্ধে ৩টি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছেন কাজী রফিক।
তিনি আরও বলেন, আমি বিএনপির অভিভাবক দেশনেতা তারেক রহমানের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই. আপনি দয়া করে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। দখলকৃত জমি মুক্ত করতে এবং এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঐতিজ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত এমপি প্রার্থী হয়ে কাজী রফিকুল ইসলাম বাড়িটি দখল করে রাখায় তৈরি হয়েছে কৌতুহল। কেউ কেউ বলছে, এ ধরণের ব্যাক্তিকে চুরান্ত মনোনয়ন দিলে জনসাধারণের মধ্যে দল হিসেবে বিএনপি বিতর্কিত হবে।
এদিকে, ভবন নির্মাণের চুক্তির দোহাই দিয়ে বাড়িটির মূল দলিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কুক্ষিগত করে রেখেছে বলেও অভিযোগ খন্দকার মুজাহিদুল ইসলামের। বাড়ীর সামনে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিশাল আকারের সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে। র্যান্স রিয়েল এস্টেট লিঃ কোম্পানীর সাথে রেজিস্ট্রিকৃত ডিড অব এগ্রিমেন্ট থাকায় অন্য কোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে আইনগত চুক্তি করার কোন সুযোগ নেই। অথচ খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম অন্য ডেভোলোপার কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি করেছে, এই অপবাদ দিয়ে জমির মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করছে।
মামলার এজহার থেকে জানা যায়, কাজী রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন র্যান্স রিয়েল এস্টেট লিঃ কোম্পানী বাড়িটি দখল করে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাড়ির মালিক খন্দকার মুজাহিদুল ইসলামকে গত ৭ বছর ধরে পরিশোধ করতে বাধ্য করছে। প্রতিবাদ করলে গত বছর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রফিকুল ইসলাম জমির মালিকের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নম্বর সি,আর ১২১৯/২৪।
খন্দকার মুজাহিদুল ইসলামের করা মামলা এজহার থেকে আরও জানা যায়, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান র্যান্স রিয়েল এস্টেট লিঃ কোম্পানীর সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার (নাসা গ্রুপ), আওয়ামী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসাবে জুলুম, জালিয়াতি, ভূমিদস্যু ও ব্যাংক লুটকারী হিসেবে তার আধিপত্য ও প্রভাব খাটিয়েছেন। বর্তমানে নানা অপকর্মের কারণে তিনি জেলে আছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমান সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম (সাবেক সংসদ সদস্য, বগুড়া ১) স্বৈরাচারের দোসর নজরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে আতাত করে গত ১৬ বছর ধরে আমাদের জোরপূর্বক বাড়ীটি দখল করে আছেন। আমরা যাতে এর প্রতিবাদ করতে না পারি এজন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে ৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে রেখেছে।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, কোম্পানীটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৮টি জমির মালিকের সাথে চুক্তি করে। যার মধ্যে ৬টি প্রকল্প সমাপ্ত ও অর্ধ সমাপ্ত করে। বাকী ১২ টি প্রকল্পের মালিকদের সাথে প্রতারনামূলক একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করে একই উপায়ে হয়রানি করে তাদেরও জমি দখল করে আছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর