সাইবার সহিংসতার ব্যাপকতা তখনই বেড়ে যায়, যখন আক্রমণের শিকার নারী, কন্যা বা প্রান্তিকজন প্রযুক্তিবিমুখ হয়ে ওঠেন। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সংঘবদ্ধ সাইবার আক্রমণ বেড়েছে। নারী ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে গেলেই এসব আক্রমণ বেড়ে যায়। এখানে নারীর কর্ম যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা না হয়ে এসেছে– লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ভিত্তিক গালি ও অপমান, শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও পোশাক নিয়ে অপমান ইত্যাদি। তাই নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাইবার জ্ঞান অর্জন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতার প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সাইবার সহিংসতাসহ নারী ও কন্যার সকল প্রকার নির্যাতনকে না বলুন, নারী ও কন্যার অগ্রসরমানতা নিশ্চিত করুন’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে মহিলা পরিষদ এই আয়োজন করে।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে এবং লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) শেখ আশফাকুর রহমান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপপুলিশ কমিশনার মোসা. ফারহানা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নুজহাত-ই-রহমান, দৈনিক সমকালের রিপোর্টার দ্রোহী তারা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যলয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, আজ ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির চেয়েও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে সাইবার ক্রাইম। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে সাইবার সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ করতে হবে।
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক নোভা আহমেদ সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– সাইবার সহিংসতা বা অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হলে সহায়তা চাওয়ার দিকটি প্রযুক্তি শিক্ষায় যুক্ত করা; আইনের প্রয়োগ, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-পরিমার্জনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা; সাইবার আক্রান্তজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
শেখ আশফাকুর রহমান বলেন, সাইবার সহিংসতার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বিটিআরসিকে আইনকানুন অনুসরণ করে চলতে হয়। বিটিআরসিকে আইন সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট সাইট ভিজিটের অনুমতি দেয় না। যত দ্রুততার সঙ্গে সাইবার সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তত দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা দুরূহ হয়। ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, সাইবার সহায়তা প্রদানকারী ও সাইবার সহায়তা গ্রহণকারী উভয়কে প্রযুক্তিগত বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে ও প্রশিক্ষিত হতে হবে। অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতে, নৈতিক মানসম্মত জাতি তৈরিতে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। শিক্ষায় সাইবার নিরাপত্তা আইনের দিকটি যুক্ত করতে হবে।
দ্রোহী তারা বলেন, সাইবার নিরাপত্তায় দ্রুত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর সর্বশেষ খবর