ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার ব্যত্যয়ে গ্রেফতারের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল হাসিমকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে হাজতি আসামি মো. সাজ্জাদ মিয়া ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মুরাদ আহমেদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা জজ আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. শামসুল আলম সিদ্দিকী।
আদালত আজ ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ইটনা থানার ওসিকে উপস্থিত হয়ে তার কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার (২১ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৪ এর বিচারক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিশেষ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়, ২০২৫ সালে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী সাত বছরের অধিক সাজাযোগ্য অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশের কাছে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকতে হবে। শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে এ ধরনের গ্রেফতার আইনসম্মত নয়।
কিন্তু মামলার নথি পর্যালোচনায় আদালত দেখতে পান, ইটনা থানার ওসি বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, ১৯০৮-এর ৩ ধারায়- যার শাস্তির মেয়াদ সাত বছরের অধিক কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়েছেন। অথচ গ্রেফতারের পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বা যাচাই-বাছাইয়ের প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।
আদালত বলেন, ‘যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ’ ও ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’র মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সাত বছরের অধিক সাজাযোগ্য অপরাধে কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেফতার ফৌজদারি কার্যবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে পুলিশ আইন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও ৬৭(ক) ধারারও ব্যত্যয় ঘটেছে।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, যাচাই-বাছাই ছাড়াই রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আন্দোলনকারীদের নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হিসেবে জড়ানোর চেষ্টা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনগত পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আবু নায়েম ও জসীম উদ্দিন শুনানিতে বলেন, মুরাদ আহমেদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং এনসিপির অনুমোদিত সমন্বয় কমিটির সদস্য। দাখিলকৃত নথিতে স্পষ্ট, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির সদস্য নন কিংবা কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন।
অপরদিকে আসামি মো. সাজ্জাদ মিয়ার পরিবারও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তার মেয়ে অর্পিতা সুমাইয়া সুলতানা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন- এ মর্মে দাখিলী কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে। তবুও কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছাড়াই তাকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে সন্দেহভাজন দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইটনা উপজেলা শাখার সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আফজাল হোসাইন শান্ত বলেন, মুরাদ আহমেদ উপজেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটির সদস্য। তাকে প্রথমে পারিবারিক বিরোধের ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না।
কিশোরগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, অন্য একটি দলের প্রভাবেই পুলিশ এ কাজটি করেছে। মুরাদ আহমেদ জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সংক্রান্ত কোনো মামলার আসামি নন। পুরো বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অন্যদিকে ইটনা থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, মুরাদ আহমেদ যুবলীগের নেতা ছিলেন। পরে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ২০২৫ সালে এনসিপিতে যোগ দেন। তিনি এলাকায় যুবলীগ নেতা হিসেবেই পরিচিত। আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনার বিষয়ে এখনো কোনো কাগজ পাইনি। পেলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করবো।
উল্লেখ্য, মুরাদ আহমেদকে (৩৮) গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ইটনা পুরাতন বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মিছিলে হামলার ঘটনায় তিনি ও তার সহযোগীরা অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর