ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনটি আনন্দ উৎসবের বদলে পরিণত হলো বিষাদে। দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী জেমসের গান শোনার জন্য যখন স্কুলের হাজারো প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছিলেন, ঠিক তখনই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। সেই ভয়াবহ মুহূর্তের প্রত্যক্ষ ছিলেন উপস্থাপক শ্রাবণ্য তৌহিদা; সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরলেন ঘটনার বর্ণনা, সঙ্গে প্রকাশ করেন কষ্ট-আক্ষেপ।
শ্রাবণ্য তৌহিদা জানান, অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে চলছিল। নগর বাউল জেমস ঠিক তখনই মঞ্চে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শ্রাবণ্য যখন মঞ্চে র্যাফেল ড্র পরিচালনা করছিলেন, হঠাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো পাথর ও ইট পড়তে শুরু করে।
ফেসবুক পোস্টে এই উপস্থাপক উল্লেখ করেন, হঠাৎ একটি বড় পাথর ঠিক আমার সামনে এসে পড়ল। মুহূর্তের মধ্যে সব বদলে গেল। এক বুক আশা আর ভালোবাসা নিয়ে আসা মানুষের চোখেমুখে তখন শুধু আতঙ্ক।
তৌহিদা আরও উল্লেখ করেন, প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল আয়োজকরা। ইটের আঘাতে অনুষ্ঠানস্থলেই প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অনেকে রক্তাক্ত হন। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা অনিশ্চয়তার পর নিরাপত্তার স্বার্থে অনুষ্ঠানটি পণ্ড ঘোষণা করতে বাধ্য হন আয়োজকরা।
শ্রাবণ্য তৌহিদা তার পোস্টে আক্ষেপ করে বলেন, শিল্পী হিসেবে তিনি এবং জেমস উভয়েই তাদের পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কিন্তু যে মানসিক আঘাত এবং হাজারো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, তা কোনো টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।

কেন এই বিশৃঙ্খলা?
আয়োজক কমিটির সূত্র অনুযায়ী, অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র নিবন্ধিত প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু জেমসের কনসার্টের খবর শুনে হাজার হাজার অনিবন্ধিত বহিরাগত দর্শক স্কুলের সামনে ভিড় করেন। তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ায় তারা মুজিব সড়কে অবস্থান নেন এবং একপর্যায়ে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। বাধা পেয়ে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দিক থেকে স্কুল প্রাঙ্গণ ও মঞ্চ লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে আয়োজক কমিটির আহ্বায়কসহ অন্তত ২৫-৩০ জন আহত হন।
এদিকে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কড়া মেজাজে অনুষ্ঠান স্থল থেকে বের হয়ে তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠে পড়েন জেমস। এ সময় তার সঙ্গে থাকা লোকগুলো শিল্পীর নিরাপত্তার দিকটা খেয়াল রাখেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ৫ জন নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা পুলিশ ও আয়োজক কমিটি দ্রুত তা নাকচ করে দেয়। পুলিশ নিশ্চিত করে, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটের আঘাতে অনেকে আহত হলেও নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আহতদের মধ্যে ১০-১২ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর