আসছে ফেরদৌস অভিনীত ‘এক কাপ চা’..

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৪, ০৪:৫১ এএম

দিবাকর বিশ্বাস:

২৮ নভেম্বর মুক্তি পাবে ফেরদৌস অভিনীত ছবি এক কাপ চা।ছবি প্রচারনার কাজে এখন ভীষন ব্যাস্ত সময় পার করছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস।সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য কয়েক বারের চেষ্টায় যখন তাকে ফোনে পাওয়া গেলো তখন তিনি সময় বেঁধে দিলেন তার কাকরাইলের অফিসে ঠিক সন্ধ্যা ৬টা।

নির্দিষ্ট সময়ে অফিসের দোতলায় তার অফিস কক্ষ্যে যেতেই হাসিমুখে স্বাগত জানালেন ফেরদৌস।কথা প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন তার সিনেমায় অভিনয় করার শুরুর দিকের সময়ে "নয়টা- পাঁচটা অফিসের চিন্তা আমার কখনোই টানতো না। ব্যাতিক্রম কিছু করার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো।ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ফ্লাইং শিখে ছিলাম। এরপর বিবি রাসেলের হাত ধরে র্যাম্পে কাজ করা।সেসব ছবি মিডিয়ায় আসা শুরু করলে পরিচালকেরা ছবি করার প্রস্তাব দিতেন "।এভাবেই ফেরদৌস চুক্তিবদ্ধ হয়ে ছিলেন

"পৃথিবী আমাকে চায়না " ছবিতে। এরপর ছটকু আহমেদের " বুকের ভিতর আগুন " ছবিতে অভিনয় করলেও বাসু চাট্যার্জীর হঠাত বৃষ্টি ছবির মাধ্যমেই সিনেমা প্রেমীদের মাঝে সাড়া ফেলে দেন ফেরদৌস।এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই ছবিই ফেরদৌসের সিনেমা জগতে পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও এনে দিয়েছে ।

তা সেই ১৯৯৮ সালের হঠাত বৃষ্টির ফেরদৌস আর ২০১৪ সালের এক কাপ চা এর ফেরদৌসের ভিতর পার্থক্য কি ? প্রশ্ন শুনে ফেরদৌস তার ট্রেড মার্কা হাসিটি দিয়ে বললেন " দীর্ঘ এই পথচলায় সবার ভালোবাসাতেই আজকের ফেরদৌস হয়েছি।কারো সাথে দ্বন্দ নয় বরং বন্ধুত্বের বাঁধনে সবাইকে বাঁধতে চেয়েছি । ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়তাম বন্ধুরা হয়তো টিএসসিতে আড্ডা দিতো, আমি হয়তো তখন শুটিংয়ের কাজে ব্যাস্ত থাকতাম ।ঐভাবে পাবলিক প্লেসে যেতে পারতাম না লোক জড়ো হ ওয়ার জন্য।তবে সবার সহযোগীতা আর ভালোবাসাতেই আজকের এই পর্যন্ত এসেছি "।

এপার বাংলায় ওপার বাংলায় ছবি করার প্রসঙ্গ তুলতেই ফেরদৌস বললেন " বাংলাদেশের একেই টাইপের ছবি করতে করতে কিছুটা এক ঘেয়েমি এসে গিয়ে ছিলো।যেমন খায়রুন সুন্দরী ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার পর সবাই এই টাইপের ছবি বানাতে লাগলো। ছবির গল্পে বৈচিত্র না থাকায় নিজের কাছেই খারাপ লাগতো। দেখা গেলো যে প্রত্যাশা নিয়ে ছবির কাজ শুরু করেছি শুটিং শুরুর পর সেই প্রত্যাশা পূরন করতে পারেনি। তাছাড়া যেসব গুনী পরিচালকেরা শিল্পী তৈরীর কারিগর ছিলেন তারাও সিনেমা বানানো বন্ধ করে দিলেন। তাছাড়া কোলকাতার ছবিতে যেহেতু অভিনয়ের সুযোগ ছিলো তাই এক ঘেয়েমি কাটাতেই ভারতের চলচ্চিত্রে অভিনয় করা "।

তা এই দুই বাংলায় ছবি করতে গিয়ে সংসার সামলাতে ঝামেলা হয়না? এমন প্রশ্নের জবাবে লাজুক হেসে ফেরদৌস বলেন " তানিয়া পাইলট আর আমি ব্যস্ত থাকি সিনেমা নিয়ে তবে সপ্তাহে অন্তত তিন-চারটা দিন আমরা এক সাথেই থাকি।পরিবারকে সময় দেয়া বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনা সব কিছুই ভীষন উপভোগ করি। আমি ভীষন পরিবার কেন্দ্রিক মানুষ, অবসরে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করি ।"

এক কাপ চা ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো ১৪ ই নভেম্বর সেখানে মুক্তি পাচ্ছে ২৮ নভেম্বর।মূলতো টেকনোলজি সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারনেই ছবিটির মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে।তবে ছবিটি নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ই ফেরদৌস।এই ছবিটি কেন দেখা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে হাসি মুখেই বলেছেন " দেড় কোটি টাকা বাজেটের এই ছবিটির শুটিং হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে।ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মৌসুমী, ঋতুপর্না, হুমায়ূন ফরিদীর সহ এক ঝাঁক তারকা শিল্পীরা।এতে ব্যবহার করা হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান ও ।আড়াই ঘন্টা হলে বসে থাকার মত সব ধরনের বিনোদন ই ছবিটির ভিতর আছে "।

ছবির নামকরন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন " আমার প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এই ছবিটি যেহেতু আমি প্রযোজনা করেছি তাই চেয়েছি সবকিছুতেই একটু ব্যতিক্রমধর্মী ছোয়া দিতে।ছবিটির নামটিও তাই ব্যাতিক্রম ।তাছাড়া বাসু চ্যাটার্জীর এক কাপ চা গল্পটির নামটিও ভালো লেগেছে ।এজন্য ই ছবির নাম এক কাপ চা রেখেছি "।

ছবিতে অভিনয় করেছেন কোলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্না এবং বাংলাদেশের মৌসুমী।ছবির কাস্টিং প্রসঙ্গে আসতেই ফেরদৌস বললেন " এই ছবিটির গল্প জানার পর আমার চোখে নায়িকা হিসেবে যে দুটি মুখ ভেসে উঠেছিলো তাহলো ঋতু আর মৌসুমী।দুজনের সাথে বোঝাপড়াটাও দারুন এছাড়া এই ছবির জন্য ওরাই পারফেক্ট ছিলো "।

ফেরদৌস এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।বর্তমানে মৌসুমীর শূন্য হৃদয়, মন জানেনা মনের ঠিকানা, স্বর্গ থেকে নরক, ভাবীর আদর সহ অনেকগুলো ছবির কাজে ব্যস্ত।

বর্তমানে দেশের চলচ্চিত্র একটা খারাপ সময় পার করলেও চলচ্চিত্র নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ফেরদৌস " বর্তমানে আমাদের চলচ্চিত্রটা একটা পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে, সব কিছুই ডিজিটাল হচ্ছে, নতুন ছেলে-মেয়েরা আসছে।হয়তো একটু মানিয়ে নিতে সময় লাগবে।তবে আগামীতে ভালো কিছুই হবে আশা করি।"

কথা প্রসঙ্গে জানালেন পরিচালনায় আসার ইচ্ছে নেই তবে আরো কয়েকটি ছবি প্রযোজনা করতে চান তবে আপাততো সব ব্যস্ততা এই এক কাপ চা কে ঘিরেই।এরপর আগামী মাসের ১৫-২০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বপরিবারে আমেরিকায় যাবেন ছুটি কাটাতে।

সাক্ষাতকারের শেষ অংশে ফেরদৌস কিছুটা যেন আবেগী হয়েই পড়লেন।বললেন " আমাদের বাংলা সিনেমা নিয়ে অনেকেই গঠনমূলক আলোচনা না করে নেতি বাচক ধারনা এবং মন্তব্য পোষন করেন।এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার ।আমরা যদি কোথাও ভুল করি সেটা বুঝিয়ে বলেন, হাস্যরসাত্মক সমালোচনা কেন হবে ? দেশটাতো আমাদেরেই, বাংলা চলচ্চিত্র তো আমাদেরেই শিল্প "।

সাক্ষাতকারের সময় একটু পর পর ফোন বেজে উঠলেও কেটে দিয়েছেন ফেরদৌস।অবশেষে সাক্ষাতকার পর্ব শেষে বললেন " আজ উঠতে হবেরে ভাই।ছবিটি নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি "।ঘড়ির দিকে তাকালাম।যাহ! বাবা ১ টা ঘন্টা কি দ্রুত কেটে গেলো টেরেই পেলাম না।বিদায় নেয়ার সময় ও দেখা গেলো ফেরদৌসের মুখে চিরচেনা সেই হাসিটা লেগে রয়েছে।এক কাপ চা মুক্তির পর এই হাসি ফেরদৌসের মুখে বজায় থাকুক এমনটা চাওয়া সব ফেরদৌস ভক্তদেরেই ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: