বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্ব, অন্তরালে হাততালি দিচ্ছে আ’লীগ

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৩:১৭ পিএম

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ অনেকটা সম্পন্ন করেছে এই সরকার। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে থাকা অনেক যুদ্ধাপরধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ জাময়াতে ইসলামী দলের সাথে যুদ্ধাপরাধীর কালী ছিল। দলের সিনিয়র নেতাদের ফাঁসি হওয়ার মাধ্যমে তা প্রায় শেষ হয়েছে। বর্তমানে জামায়াত অনেকটা কলঙ্কমুক্ত। তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে দলটির বর্তমান নেতারা।

দলটির সিনিয়র নেতাদের যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার চলাকালে ও ফাঁসি কার্যকরের সময়ে রাজনৈতিকভাবে বেশ কাবু ছিল দলটি। তখন হরতাল-অবরোধসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছে তারা। সেই সময়ে জামায়াতের জোট প্রধান বিএনপি তাদের (জামায়াত) কর্মসূচিতে কোন ধরনের সাড়া দেয়নি। এছাড়া বিভিন্ন সময় জামায়াতকে দেয়া কথা রাখেনি বিএনপি। জামায়াতকে যতগুলো ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও পৌরসভাতে মনোনয়ন দেয়ার কথা ছিল, সে কথাও রাখেনি বিএনপি।

সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দেয়ার সময়ও জামায়াতের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা করেনি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব কারণে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। পিছনের কথা মাথায় রেখে যুদ্ধাপরাধ থেকে কলঙ্কমুক্ত জামায়াত এখন বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ রাজনীতি করলেও ডিএনসিসি উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগেই নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত। এমনকি জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে একজন ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এরপরই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন নিয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সে বৈঠকেও কোন সমাধান হয়নি। তবে ওই বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের অনেকে জামায়াতের প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকে পাত্তা না দিয়েই এ নির্বাচনে লড়তে চায় জামায়াত। নিবন্ধন ও প্রতীক হারানো এই দলটির প্রার্থীকে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রাখতে চায় জামায়াত। শেষ পর্যন্ত লড়াইয়েও থাকতে চায়। ফলে জোটের মধ্যে ভাঙনের সুরও উঠেছে। বিএনপির বাইরে গিয়েও নির্বাচন করতে পারে সেটা প্রমাণ করা এবং জামায়াতের নিজস্ব ভোট ব্যাংকের সামর্থ্য দেখাতেই নিবন্ধন হারানো দলটি উঠে পড়ে লেগেছে। কোনো পক্ষই কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

এদিকে আজ (১৩ জানুয়ারি) রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এই বৈঠক শেষে আজকেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ-নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করার কথা রয়েছে বিএনপির। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত মঙ্গলবার নয়া পল্টনে সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, ‘আগামী শনিবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চান জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে। জোটের বন্ধন অটুটও রাখতে চান তিনি।’

তবে সব মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব অনেকটা এখন প্রকাশ্যে। গণমাধ্যমের পাতা খুলেই এখন বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েনের খবর হরহামেশাই দেখা যায়। এতে কে লাভবান হবে, বিএনপি না জামায়াত সেটা বড় কথা নয়। তবে বিএনপি-জামায়াতের এই দ্বন্দ্বে অন্তরালে হাততালি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যদি সত্যিই জামায়াত জোট থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটা বড় আর্শীবাদ। তবে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপির সতর্ক থাকা উচিত। কারণ ১৯৯৬ সালে জামায়াত চার দলীয় ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছিল।

ডিএনসিসির নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরম করা জামায়াতে ইসলাম কি চায়? যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জামমায়াত কি তাহলে ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই ১৯৯৬ সালের পথেই হাঁটবেন? এ প্রশ্ন এখন সবার।

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

লেখক: এম এম আশরাফুল আলম।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: