ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:০১ এএম

বসন্ত মানে নবীন প্রাণ,নবীন উৎসাহ,নবীন উদ্দীপনা,যৌবনের সঞ্জীবনী রসে পরিপুষ্ট। বসন্তের আগমনে অশোক পলাশের রঙিন বিহ্বলতায় ও শিমুল কৃষ্ণচূড়ার বিপুল উল্লাসে,মধুমালতী ও মাধবী মঞ্জুরির উচ্ছল গন্ধমদির প্রগলতায় সারা আকাশতলে গন্ধ, বর্ণ ও গানের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি। তাই কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছেন,কুহেলী ভেদিয়া-/জড়তা টুটিয়া/এসেছে বসন্তরাজ।/নবীন আলোকে/নবীন পুলকে/সাজিছে ধরণী আজ।

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। দক্ষিণা সমীরণে, ভ্রমরের গুঞ্জনে আকুল করা ব্যাকুল নিসর্গে আজ প্রাণের দোলা।পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহতান, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর। কবি তাই বলেছেন ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে...’। তবে বসন্তের সমীরণ বলছে এ ঋতু সব সময়ই বাঙালির মিলনের বার্তা বহন করে। প্রকৃতির চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ি বন বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠেছে  চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লেগেছে রঙের দোলা। হৃদয় হয়েছে উচাটন।

এদিনে অসংখ্য রমনী বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী সুশোভিত করে তোলে। বসন্তের পূর্ণতার এ দোলা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সকল বাঙালির ঘরে ঘরে। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন, সব এ বসন্তেই।

শীতের রথের ঘূর্ণিধূলির আড়াল দিয়ে নবীন সূর্যের আলোয় স্নাত হয়ে বসন্ত আসে। শীতের ত্যাগের সাধনা তো বসন্তের নবজম্মের প্রতীক্ষায়। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে অনন্ত যৌবনা মধুর বসন্তে আজ সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই আজ  গেয়ে উঠবেন ‘মনেতে ফাগুন এলো..’। বসন্ত তারুণ্যের ঋতু বলেই সবার মনে বেজে ওঠে, কবির ওই বাণী ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পয়লা ফাল্গুন আনন্দের দিনে’।

১৮ বছর আগে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি ফুলের প্রীতি বন্ধনী ও বসন্ত কথনের মাধ্যমে রাজধানীর চারটি স্পটে  বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।

সকালে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসঙ্গীতের মুর্ছনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় বসন্তের আবাহন। চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সেখানেই আবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে বসন্ত বন্দনার উৎসব। এ ছাড়া বিকাল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একযোগে বসন্ত আবাহনের উৎসব চলে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে।

উৎসবে শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা, আদিবাসী পরিবেশনা, বসন্ত কথন পর্ব, আবীর ও প্রীতিবন্ধনী বিনিময়, দলীয় সঙ্গীত, দলীয় আবৃত্তি, একক সঙ্গীত, একক আবৃত্তি, বাউল সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বসন্ত শোভাযাত্রা বের করা হয়। বসন্ত কথন পর্বে অংশগ্রহণ করেন দেশ বরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রকৃতির মতো মানুষের মনে ঢেউ খেলে যায় নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা।বসন্ত মানুষের প্রাণের আরাম,মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি।প্রকৃতির রূপের নেশায় মানুষ পাগলপ্রায়।কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাসের মতো বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে আাসুক অনাবিল সুখের পরশ। বাংলাদেশ হোক অপূর্ব মায়া নিকেতন।

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: