হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা
মিরপুর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও গ্রামের পূর্ববর্তী বেন্দারবন্দ নামক হাওর থেকে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর রহমানের পুরুষাঙ্গ কাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশ এ মরদেহ উদ্ধার করে।
এরপর, হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা শামীম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাহুবল মডেল থানায় অনুষ্ঠিত প্রেস বিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সিনিয়র এএসপি নাজিম উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলী, সার্কেল অফিসের ইন্সপেক্টর বিশ্বজিৎ দেব, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মহরম আলী।
পুলিশ জানায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের খোজারগাঁও গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নানের পুত্র হাবিবুর রহমান পার্শ্ববর্তী বিৎহারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করত।
শিশু বয়সেই হাবিবুর প্রেম-ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে এক সহপাঠী ছাত্রীর সাথে। মাসখানেক আগে ওই ছাত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায় ছাত্রীর ভাই শামীম আহমদ (পুলিশ তার বয়স ১৮ উল্লেখ করলেও স্বজনদের দাবি তার বয়স ১৭-এর কম)। বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি শামীম। সঙ্গে সঙ্গেই সে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেও দ্রুত পালিয়ে যায় হাবিবুর। এ ঘটনার পর থেকেই শামীম তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বিষয়টি গোপন রেখেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজতে থাকে।
কোনোভাবেই সে সুযোগ পাচ্ছে না শামীম। এ অবস্থায় গত শুক্রবার থেকে তিনদিনব্যাপী তাফসির সম্মেলন শুরু হয় পার্শ্ববর্তী বানিয়াগাঁও মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীম নিজ গ্রামের ইউনুছ মিয়ার পুত্র শাহজাহান মিয়া (১২) ও জয়নুল্লাহ-এর পুত্র জুয়েল মিয়া (১২)কে ফুসলিয়ে তার সহযোগী করে। শাহজাহান ও জুয়েলকে দায়িত্ব দেয় হাবিবুর রহমানকে ওই তাফসির সম্মেলনে নিয়ে আসার। পরিকল্পনামতো শুক্রবার হাবিবুরকে তাফসিরে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হলেও শাহজাহান ও জুয়েল শনিবার সফল হয়। শনিবার বিকালে তারা তাকে নিয়ে বানিয়াগাঁও মাদ্রাসা সংলগ্ন তফসির সম্মেলনে নিয়ে যায়। সেখানেই তাদের সঙ্গে দেখা করে শামীম। একপর্যায়ে সকলকে একটি দোকানে নিয়ে চা-বিস্কুট খাইয়ে বন্ধুত্ব জমিয়ে তোলে শামীম।
রাত ৯টার দিকে শামীম আহমেদ বাড়ি ফেরার উদ্দেশে হাবিবুর, শাহজাহান ও জুয়েলকে নিয়ে রওনা হয়। হাওরের মধ্যবর্তী স্থানের একটি মেঠোপথ ধরে তারা ৪ জন বাড়ি ফেরা শুরু করে। তারা বেন্দারবন্দ হাওরে একটি সেচপাম্পের কাছে পৌঁছামাত্র পূর্ব পরিকল্পনামতো শামীম জাপটে ধরে হাবিবুরকে। একপর্যায়ে শাহজাহান ও জুয়েলের সহযোগিতায় তাকে মাটিতে ফেলে গলাচেপে ধরে। শ্বাসরোধ হয়ে হাবিবুর নিস্তেজ হয়ে পড়লে শামীম সঙ্গে থাকা ধারালো ব্লেড দিয়ে হাবিবুরের পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ সেখানেই রেখে হাবিবুর নিজ দায়িত্বে শাহজাহান ও জুয়েলকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে, হাবিবুরের পিতা ওই রাতে তার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ছিলেন। হাবিবুর নিখোঁজের খবর পেয়ে তিনি শনিবার রাত ১২টার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন এবং খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ফজরের নামাজের পর গ্রামে মাইকিং করে নিখোঁজের খবরটি প্রচার করা হয়। সকাল ১০টার দিকে গ্রামের এক ইটভাটা শ্রমিক বেন্দারবন্দ হাওরে হাবিবুরের মৃতদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। খবর পেয়ে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাবিবুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। বিকেলে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র এএসপি নাজিম উদ্দিন, বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুক আলী ও কামাইছড়া পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মহরম আলী নিহতের বাড়িতে যান।
এ সময় তারা নিহতের পরিবার ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন নিহত হাবিবুর এবং একই গ্রামের শামীম, শাহজাহান ও জুয়েল আগের দিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী বানিয়াগাঁও মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত তাফসির মাহফিলে ছিল। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা শামীম, শাহজাহান ও জুয়েলকে ডেকে এনে গ্রামবাসীর সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা পাওয়া গেলে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের কামাইছড়া পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ঘটনার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিলে রোববার বিকালে পুলিশ তাকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করে। এ সময় শামীম ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: