২৪ ঘণ্টা আগে সন্তান হারিয়েও পরীক্ষা দিলেন মা!

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৮, ০৬:১১ পিএম

গর্ভস্থ ছেলে সন্তানকে হারিয়েছেন ২৪ ঘণ্টাও হয়নি। শরীরের এমন অবস্থা যে সোজা হয়ে বসার মতো শক্তিও নেই তার। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় শরীর বিমর্ষ। কিন্তু তাতে কি পরীক্ষায় তাকে দিতেই হবে। এমনই মনে করেন ওই সদ্য সন্তান হারানো মা। মেডিকেলের বিছানায় শুয়েই উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা দিলেন সন্তানহারা পরীক্ষার্থী।

জানা গেছে, মালদা মেডিকেল কলেজের বিছানায় শুয়েই উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিয়েছেন পুত্রসন্তানহারা সায়েমা খাতুন। খোদ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও তার মানসিকতার তারিফ করছেন। 
 
মালদহের গাজোল থানার বৈরগাছির বাসিন্দা সায়েমা খাতুন। স্থানীয় রানিনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সায়েমা খাতুনের   দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার সিট পড়ে পুকুরিয়া হাইস্কুলে। মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) পুকুরিয়া হাইস্কুল কেন্দ্রেই উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দেন সায়েমা খাতুন। 

তবে বুধবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সন্তানসম্ভবা ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নিজ বাড়িতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এরপর দুপুর পৌনে ৩টা দিকে তাকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে বিকেল বেলা চিকিৎসক দল তার সিজার করেন। অতি দুঃখের সংবাদ হলো তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন।

এ কথা শোনার পর তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত সন্তানের কথা শোনার পর মা হিসেবে প্রচণ্ড কষ্ট পান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সায়েমাও। একদিকে প্রিয় সন্তান হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে শরীরে অস্ত্রপচারের ধকল। অপরদিকে উচ্চ মাধ্যমিক। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন সায়েমা। 

এমন ঘটনায় উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলি আর তার দেয়া হচ্ছে না, এমনটাই মনে করেছিল সবাই। কিন্তু না তিনি সবাই অবাক করলেন। 

বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) সকালে সবাইকে অবাক করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছের কথা জানান সায়েমা। এরপর তড়িঘড়ি করে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের একপাশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সায়েমার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবর দেয় শিক্ষা দফতরকে।

এরপরেই মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ও পরীক্ষক পাঠানো হয়। পৌঁছে দেওয়া হয় প্রশ্ন ও উত্তরপত্রও।

মৃত পুত্রসন্তান প্রসব, অস্ত্রপচারের ধকল এতে শরীরের যা পরিস্থিতি, তাতে এখনো উঠে বসার মতো সামর্থ্য নেই সায়েমার। তাই তো শয্যাশায়ী অবস্থাতেই পরীক্ষা দিতে হয় সায়েমাকে। সন্তান হারালেও শিক্ষার সুযোগ হারাতে চান না বুক ভরা শোকাতুর সায়েমা খাতুন। 

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: