তাসপিয়া হত্যা মামলার আসামি আদনানের বাবার বক্তব্য!

প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৮, ০৭:২৩ পিএম

আদনানের বাবা ইস্কান্দার মির্জার কাছে আদনানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদনান আমার অবাধ্য ছেলে। বন্ধুদের সাথে মিশে অবাধ্য হয়ে গেছে আদনান। ছেলেটি এতো নষ্ট হয়ে যাবে আামি ভাবিনি। তার বন্ধু সোহেলের সাথে মেলামেশার কারণেই আজকে আদনানকে কারাগারে যেতে হয়েছে। এছাড়া সে রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের নোংরা রাজনীতির শিকার। ‘সে এতো নষ্ট হয়ে যাবে আামি ভাবিনি। সে রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের নোংরা রাজনীতির শিকার।’

ইস্কান্দার মির্জা বলেন, তাসপিয়া নিখোঁজের দিন আদনানকে বাসায় বন্দি করে রেখেছিল তাসপিয়ার বাবা-চাচারা। তাদের থেকে আদনানকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে এক রাজনৈতিক বড় ভাই। এতো ঘটনা হয়ে যাওয়ার পরও আমাকে কিছুই জানানো হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি আদনানকে টেলিফোন করি, তবে আদনান আমাকে জানায় গাড়ি নষ্ট হয়েছে, ঠিক করা হচ্ছে তাই সময় লাগছে। পর দিন দেখি আদনান পুলিশের হাতে গ্রেফতার।

ইস্কান্দার মির্জা বলেন, আদনান আমার ছেলে হলেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য কেউ। ভুল পথে পা দিয়েই আজ তাকে বিপদে পড়তে হলো তাকে।

আদনানের বাবা ইস্কান্দার মির্জার স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি সৌদি প্রবাসী। সেখানে মক্কায় পারিবারিক দোকান আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারির দেখাশোনা করতেন। ২০১৬ সালে বিদেশ থেকে একেবারেই দেশে ফিরে আসেন। সেই থেকে নগরীর পশ্চিম খুলশী জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির নিজস্ব ভবন রয়েল পার্কে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

&dquote;&dquote;তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিনের দাবি, তাসপিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২ মে সকালে তাসপিয়ার লাশ উদ্ধারের পর পরই আদনানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরই বিভিন্ন মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে মামলাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন ইস্কান্দার মির্জা।

মোহাম্মদ আমিন বলেন, এক আসামি ধরেই ক্ষান্ত কেন পুলিশ? আরও বাকি ৫ আসামি রয়েছে। ওরা কোথায়? পুলিশ কি কিছুই জানে না! পুলিশ চাইলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে গ্রেফতার করে মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারে। কিন্তু গ্রেফতার করছে না।

তাসপিয়া হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগরীর পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, আদনানের বাবা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন ছেলেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য। তাসপিয়া হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতায় ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আরো কিছু জানার জন্য রিমান্ডের আবেদন করেছি।

এসআই মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভিকটিম তাসপিয়ার পরনে থাকা পোশাকগুলো ডিএনএ ম্যাচ (রাসায়নিক পরীক্ষা) করানোর জন্য ১৪ মে (রোববার) আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত সিআইডি ল্যাবে পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

&dquote;&dquote;উল্লেখ্য, গত ২ মে স্থানীয়রা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে একটি লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ সৈকত এলাকার ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তর পাশে পাথরের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধার করে।

লাশ উদ্ধারের পর থেকে সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসপিয়া ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সোশ্যাল মিডিয়াসহ প্রায় সব মিডিয়াতেই এখন আলোচিত খবর তাসপিয়া-আদনানের কিশোর বয়সের প্রেম কাহিনীর করুণ পরিণতি।

সূত্র জানায়, নগরীর চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টের সিসি টিভির একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এছাড়া নগরের সন্দেহভাজন বেশ কিছু এলাকা ও তাসপিয়াদের বাসার সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাসপিয়া আমিনকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কারা নিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে, তারও তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।

তাসপিয়ার বাসার সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ১ মে বিকেল পাঁচটা ২০ মিনিটে বাসা থেকে বের হয় তাসপিয়া। এরপর আর ফেরেনি। বাসার নিরাপত্তারক্ষী লোকমান হোসেনও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একই তথ্য দিয়েছেন।

আর নগরীর গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টের সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ওইদিন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তাসপিয়া ও তার বন্ধু আদনান মির্জা সেখানে প্রবেশ করে। এরপর সন্ধ্যা ছয়টা ৩৭ মিনিটের দিকে তারা একসঙ্গে বেরিয়ে যায়।

এরপর তাসপিয়াকে একটি সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে দিয়ে আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় তার পিছু নেয় আদনান।

সন্ধ্যা ছয়টা ৪৮ মিনিটে ওআর নিজাম রোডে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, তাসফিয়ার বাসার গলির খানিক সামনে ধীরগতিতে চলছিল সিএনজি অটোরিকশাটি। বাসায় যেতে হলে ওয়েলফুড রেস্টুরেন্টের সামনের পথ পাড়ি দিয়ে মেডিকেল সেন্টারের গলি দিয়ে ঢোকার কথা। কিন্তু, সে পথে যায়নি তাসপিয়াকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি। একই সিএনজি অটোরিকশাতে রাত আটটা ১০ মিনিটে তাসপিয়াকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতপাড়ে দেখা গেছে।

সুরতহাল রিপের্টে মরদেহের এক চোখ উপড়ে ফেলা, অপর চোখ নষ্ট করে দেয়া ছাড়াও নাক-মুখ থেঁতলানো, পিঠ, বুক এবং নিতম্বে নির্যাতনের ছাপ পেয়েছে পুলিশ। তার বুকের মাঝেও নখের দাগ রয়েছে।

&dquote;&dquote;তাসপিয়ার লাশ উদ্ধারের পর ৩ মে তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন পতেঙ্গা থানায় তাসপিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদনান মির্জা মামলার আসামি ফিরোজের পরিচালিত ‘রিচ কিডস’ নামের গ্যাংস্টারের (এডমিন) প্রধান। আর বাকি চার আসামি সেই গ্যাংস্টারের সদস্য- শওকত মিরাজ, আসিফ মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম ও সোহায়েল প্রকাশ সোহেল। তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন আসামিদের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনেছেন।

তাসপিয়ার লাশ উদ্ধারের মাত্র চার ঘণ্টা পরই পুলিশের হাতে আটক হন বিদেশ ফেরত ইস্কান্দার মির্জার বড় ছেলে আদনান মির্জা। এরপর পতেঙ্গা থানা হাজত ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে চার দিন কাটিয়ে এখন গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে তার অবস্থান।

আগামী ৩১ মে আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তবে এর আগেই শুরু হয়েছে আদনানের বাবা ইস্কান্দার মির্জার নানামুখী তৎপরতা।

ইতোমধ্যে তিনি চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন আইনজীবী ঠিক করেছেন আদালতে রিমান্ড শুনানির বিরোধিতা করার জন্য।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: