‘পুরস্কার তো নেই’ নিমন্ত্রণ পত্রও দেয়া হয় না!

প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০১৮, ০৭:২২ পিএম

দেশের সরকার চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে এই পুরস্কারটি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২৬টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেয়া হয়। তবে শুরুর দিকে এতগুলো ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হতো না। ধীরে ধীরে বিশেষ গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে যোগ করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরি। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে প্রথম আজীবন সম্মাননা পুরস্কার চালু করা হয়।

কিন্তু এখনো অবহেলিত হয়ে আছে চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সেটি হল ‘স্থির চিত্র গ্রাহক ক্যাটাগরি’।

আর দুই দিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতি। নিমন্ত্রণ পত্র চলে গিয়েছে চলচ্চিত্রে সংশ্লিষ্টদের হাতে। কিন্তু যাদের পরিশ্রমে একটি চলচ্চিত্র পূর্ণাজ্ঞ রুপ পায় সেই স্থির চিত্র গ্রাহকরা যেন এই অনুষ্ঠানের আনন্দ থেকে বেশ দূরে। পুরস্কারের ক্যাটাগরিতে নাম থাকা তো দূর, নিমন্ত্রণ পত্রও দেয়া হয়না তাদের।

চলচ্চিত্রের সিনিয়র স্থির গ্রাহক জিডি পিন্টু আক্ষেপের সুরে বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্থির চিত্র। বলা যায় এটি চলচ্চিত্রের পিতৃপুরুষ। যারা এই পিতৃপুরুষদের সন্মান দেয় না, এটা তাদের দৈন্যতা।’

‘জাতীয় পুরস্কারের বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ ভ্রুক্ষেপ করেনি। এমনকি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানটিতেও আমাদের কখনও আমন্ত্রিত করা হয়নি।’

‘চলচ্চিত্রের এই শাখাটিকে পুরস্কারের আওতাভুক্ত করলে স্থির চিত্রগ্রাহকরা আরও উৎসাহী হতেন’ বলে মনে করেন জিডি পিন্টু।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ সোচ্চার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্যরাও।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বডিউল আলম খোকন বলেন, ‘স্থির চিত্র চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। তাদের পরিশ্রমেই একটি চলচ্চিত্র পূর্ণাজ্ঞরুপ পায়। জাতীয় পুরস্কারে তাদের একটা ক্যাটাগরি থাকা উচিত। যার ফলে তারা আরও ভালো কাজ করার উৎসাহ পাবে পাশাপাশি তাদের কাজের স্বীকৃতিও দেয়া হবে।’

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি জায়েদ খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘অবশ্যই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে স্থির চিত্রের একটি ক্যাটাগরি থাকা উচিত। একজন মেকাপ ম্যান, ড্রেস ম্যান পেলে তারা কেন পাবে না? শুধু স্থির চিত্র গ্রাহকরাই নয় এ পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ফাইটাররাও তাদেরও কোনো ক্যাটাগরি নেই। আশাকরি তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ বিষয়টি দেখবেন।’

বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আগামী বছর পুরস্কারের তালিকায় স্থির চিত্র গ্রাহকদের জন্য একটি ক্যাটাগরি করবেন কর্তৃপক্ষ বলে আশা করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- ২০১৬

১. আজীবন সম্মাননা: যৌথভাবে ববিতা ও ফারুক।
২. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর)।
৩. শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: ঘ্রাণ (এস. এম. কামরুল আহসান)।
৪. শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: জন্মসাথী (একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)।
৫. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি)।
৬. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে: চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)।
৭. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে: যৌথভাবে তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)।
৮. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রের: যৌথভাবে আলী রাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)।
৯. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রের: তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)।
১০. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে: শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)।
১১. শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল)।
১২. শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)।
১৩. শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: মো. হাবিব (নিয়তি)।
১৪. শ্রেষ্ঠ গায়ক: ওয়াকিল আহমেদ (অমৃত মেঘের বারি, চলচ্চিত্র: দর্পণ বিসর্জন)।
১৫. শ্রেষ্ঠ গায়িকা: মেহের আফরোজ শাওন (যদি মন কাঁদে, চলচ্চিত্র: কৃষ্ণপক্ষ)।
১৬. শ্রেষ্ঠ গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র: মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)।
১৭. শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা (বিধিরে ও বিধি, চলচ্চিত্র : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
১৮. শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার: তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)।
১৯. শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: যৌথভাবে অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)।
২০. শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)।
২১. শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)।
২২. শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক: উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)।
২৩. শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)।
২৪. শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (আয়নাবাজি)।
২৫. শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা: যৌথভাবে সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)।
২৬. শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান: মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: