জবি’র পরিসংখ্যান বিভাগে নজীরবিহীন ফল বিপর্যয়!

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৬:৪৪ পিএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৮১ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনই অকৃতকার্য হয়েছেন। ২য় বর্ষ থেকে ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হয়েছেন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী তাদের ছাত্রত্ব হারাচ্ছে। সব বিষয়ে পাস করছে ৫৫ জন। 

সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দেওয়াতেই এ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। বিশেষ করে প্রশ্ন মডারেশনের নামে জটিল জটিল বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। সারাদিন পড়াশুনা করেও শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে ফেল করতে হয়। এছাড়া কোন কোন  শিক্ষক  ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেন।

অর্ডার স্ট্যাস্টিক কোর্সে বেশি সংখ্যক ছাত্ররা অকৃতকার্য হয়েছে। ছাত্রদের অভিযোগ, কোর্সের একজন শিক্ষিকা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পড়ায়, যা কোন কাজে লাগে না । প্রশ্ন করে উল্টাপাল্টা আর ছাত্রদের সাথে বাজে ব্যবহার করেন। শিক্ষকই চাইনা কেউ পাস করুক।

এছাড়াও প্রতিবার চূড়ান্ত পরীক্ষার সাথে আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মানন্নোয়ন পরীক্ষা দেয়া নজিরবিহীন। এবার মূল পরীক্ষার্থীদের সাথে ৫১ জন ফেল করা বিষয়ে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তার মধ্যে ২৫ জন পাশ করেছে। বাকিরা আবারও ফেল করেছে। এর আগেও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের জুলাই মাসে। এতে অংশ নেওয়া ৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। সব কোর্সে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ২২ জন। তাদের গড় সিজিপিএ মাত্র ২.১৫। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন ‘লিনিয়ার অ্যালজেবরা’ কোর্সে। 

নাম উল্লেখ করে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, কোনো কোনো শিক্ষকের পাঠদান অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বোঝেন না। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক পড়াশোনার বিষয়ে ক্লাসের পরে দেখা করতে গেলে সময় দেন না।

তবে রিনিয়ার অ্যালজেবরা কোর্সের শিক্ষক বলেন, ‘প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হয়েই অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেডিকেল বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়। বিভাগের পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হয় না। ফলে প্রথম সেমিস্টারে অনেকেই অকৃতকার্য হয়।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্নাতকোত্তর ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। সেখানেও ঘটেছে ফল বিপর্যয়। ওই পরীক্ষায় দ্বিতীয় সেমিস্টারে কোর্স ছিল ছয়টি। এর মধ্যে অনেকেই গড়ে দুই থেকে তিনটি কোর্সে অকৃতকার্য হয়েছেন। বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের আবার সবগুলো কোর্সে পরীক্ষা দিতে হবে। এর প্রতিবাদে গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা।

দেখা গেছে, চূড়ান্ত পরীক্ষায় একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীর অকৃতকার্যের বিষয়টি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন। এছাড়া  প্রতিটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় বেশি সংখ্যক মানন্নোয়ন পরীক্ষার্থী  থাকা নজিরবিহীন। বারবার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েও কাঙ্খিত ফল পাচ্ছেনা ছাত্ররা। বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

বিভাগের চেয়ারম্যান আশরাফ-উল-আলম হতাশাজনক ফলের জন্য শিক্ষকদের দায়ী করার অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘পাঠদানে বিভাগের সব শিক্ষকই আন্তরিক। যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের অনেকেই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকে না।’

পাঠ বোঝাতে পারেন না এমন অভিযোগের সম্মুখীন একজন শিক্ষকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকেরা ফাঁকি দেন না। পড়া বুঝতে না পারা শিক্ষার্থীদেরই ব্যর্থতা।’

আবার পরীক্ষা দিতে হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সিজিপিএ-২.২৫ থাকলে সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না। কম হলে পরবর্তী সেমিস্টারের সঙ্গে আবার ভর্তি হতে হবে।’

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্ধতি অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে অকৃতকার্য হলে তাঁকে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে আবার পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এরপর যদি আবার অকৃতকার্য হন তাহলে তাঁর ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: