তিন শিক্ষিকাকে ‘যৌন নিপীড়ন’, সেই শিক্ষক বরখাস্ত

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৮, ১১:২৭ পিএম

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষিকাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী তিন শিক্ষিকাও একই বিভাগে পড়ান। তারা উপাচার্য এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।

তিন শিক্ষিকা তাদের অভিযোগে ওই শিক্ষকের আচরণে বিরক্ত হয়ে তার সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সমালোচনার পর বুধবার (১৮ জুলাই) ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

নাট্যকলা বিভাগের এক নারী শিক্ষক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তিনি (রুহুল আমিন) আমাদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। তার অঙ্গভঙ্গিও নোংরা।’

‘প্রায় দেড় মাস আগে আমরা রেজাল্টের কাজ করছিলাম। তিনি (রুহুল আমিন) নম্বর বলছিলেন, আমি পোস্টিং দিচ্ছিলাম। তখন একজন ডেমনোস্ট্রেটরও সেখানে ছিলেন। হঠাৎ তিনি আমার চুল ছুঁয়ে বলেন, ম্যাডাম চুলগুলো অনেক সুন্দর। তাৎক্ষণিক আমি তাকে সাবধান করি।’

‘মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দুপুরে একাডেমিক সভা শেষে পরীক্ষা কমিটির কাজ করার সময় রুহুল আমিন আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে টিপ্পনি কাটেন। আমি সবার সামনেই এই ঘটনার প্রতিবাদ করি। সেসময় তিনি ক্ষমা চান।’

&dquote;&dquote;‘এর কিছুক্ষণ পরই ওই শিক্ষক বিষয়টি আপস-মীমাংসা করতে এসে আমাকে বলেন, ‘আমি রিয়েলি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। এজন্যই বারবার এমন হয়ে যায়। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় আমার ছবি এডিট করে কুরুচিপূর্ণভাবে পাঠান এবং অশ্লীল কথাবার্তা টেক্সট করেন।’

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, ‘আমাদের বর্তমান বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গেও তিনি একই রকম কাণ্ড ঘটানোর পর আমরা তিন নারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে মঙ্গলবার বিকালে লিখিত অভিযোগ করেছি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘একাডেমিক সভায় ভাল রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি ক্ষোভে মাস্টার্সে ফেল করিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করতে চেয়েছিল বিভাগীয় প্রধানসহ কতিপয় শিক্ষক শিক্ষিকা। আমি এর প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে এরকম জঘন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন তারা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে তিন নারী শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হককে প্রধান করে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও কৃষি বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিছ কেয়াকে সদস্য করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একই সাথে এ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে প্রক্টর জাহিদুল কবীরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহিদুল কবীর বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমাকে কি কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তা আমি জানি না। তবে আমি ঘটনা শুনার পরপরই শিক্ষিকার বাসায় গিয়ে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছি। তাকে বাসায় পাইনি। পরে আমি ফোনে খোঁজ খবর নিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে বলেছি।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী স্থায়ীভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: