অহেতুক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ছোট করবেন না, মন্ত্রীকে ফারুকী

প্রকাশিত: ০৪ আগষ্ট ২০১৮, ১১:১৭ এএম

গত রবিবার বিমান বন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে নেমেছে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা। চলমান এ আন্দোলনে রাস্তার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সোচ্চার শিক্ষার্থীরা। একদিকে ‘মামা, লাইসেন্স আছে?’ ভিডিও যেমন ভাইরাল হচ্ছে, অন্যদিকে ‘ইমার্জেন্সি লেন’ তৈরির দৃশ্যও ভাইরাল হচ্ছে।

শুধু ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্লাকার্ড ধরে রাস্তায় বসে থাকা নয়; শিক্ষার্থীরা ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ’ প্লাকার্ড নিয়েও রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে।

এই নানা প্ল্যাকার্ডের স্লোগানকে কেন্দ্র করে পক্ষে বিপক্ষে নানা মতামত ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসবের মধ্যেই ‘ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গত শুক্রবার (৩ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

&dquote;&dquote;স্ট্যাটাসে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ফেসবুকে ছোট ছোট নারী শিশুদের হাতে কি সব পোস্টার দেখছি? এই কন্যা শিশুরা কাদের নোংরামির শিকার হচ্ছে?’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওরা কি জানে কি হাতে নিয়ে ওরা দাঁড়াচ্ছে-ছবি তুলছে? ওদের পিতা মাতা জানে? কারা এসব প্রচার করছে? আবার এর সাথে আছে সেইসব পোস্টারের প্রশংসা।’

এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজে লজ্জিত এবং দুঃখিত উল্লেখ করে ‘ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে’ বলে জানান মোস্তাফা জব্বার।

মন্ত্রীর এই স্ট্যাটাস নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পাল্টা এক স্ট্যাটাস দিয়ে মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন কিশোর বিদ্রোহের এই অনন্য সাধারণ ব্যাপারটাকে ভিলিফাই না করার জন্য।

বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাসটি নিচে হুবুহু তুলে দেয়া হল-

প্রিয় মোস্তফা জব্বার ভাই,

কিশোর বিদ্রোহের এই অনন্য সাধারণ ব্যাপারটাকে ভিলিফাই করার চেষ্টা করবেন না, প্লিজ। মনে রাখবেন, এরা আপনাদের শত্রু না। এরাই আপনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান সৈনিক হবে। মিরপুরে লাঠি হাতে যারা দাপিয়ে বেড়িয়েছে তাদেরকে দিয়া জয় ভাইয়েরও কাজ হবে না, ববি ভাইয়েরও না। লাগবে এই সব সোনার ছেলেমেয়েদেরই। আরো মনে রাখবেন, দুই হাজার আটে সাধারণভাবে তরুণরা আপনাদের পক্ষে ছিলো বলেই আপনাদের পক্ষে জোয়ার আসছিলো। ভাবেন এই ছেলে মেয়েরা পাঁচ-দশ বছর কোথায় যাবে। তখন এরা কত জরুরি হবে আপনাদের কাছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আমরা মেনে নিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রেদওয়ান মুজিব তাদের সম্মানে হেঁটে অফিসে গেলেন। ডিএমপির মনির ভাই বললেন শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

এখন হঠাৎ করে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটা ঘটনা, স্লোগান আর ভাষা নিয়া অহেতুক আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মকে ছোট করার ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না। এতে আপনি, আমি, আমরা, আমাদের ভবিষ্যত সবাই ছোট হচ্ছি। গালি বা স্ট্রিট ল্যাংগুয়েজের নন্দন তত্ব, সামাজিক ব্যাখ্যা এইসবে না গিয়ে আপনাকে খেয়াল করিয়ে দিতে চাই এইসব দুয়েকটা ঘটনা এই আন্দোলনের আসল চিত্র ছিলো না। এতো হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রাস্তায় এসেছে তাদের মধ্যে কত রকমের মানুষ থাকতে পারে। নব্বইয়ে ছিলো না এই রকম অতি সামান্য বিচ্ছিন্ন উপাদান?

আমি বরং সেইসব নিয়ে কথা না বলে খেয়াল করাতে চাই এই আন্দোলন কত রাজনৈতিকভাবে সচেতন স্লোগান ব্যবহার করেছে। খেয়াল করিয়ে দিতে চাই, পুলিশ-ছাত্র গলাগলি করে কিভাবে দাঁড়িয়েছিলো ফার্মগেটে, কি সুমধুর সুরে এরা জাতীয় সংগীত গেয়েছে, কি সুন্দর ভাবে লাইসেন্স চেক করে থ্যাংক ইউ বলেছে, কোথাও কোথাও চকলেট দিয়েছে। খেয়াল করাতে চাই এদের বক্তব্যে এবং কন্ঠে কতবার বঙ্গবন্ধুর কথা উঠে এসেছে রেফারেন্স হিসাবে। নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে এইভাবে দেখেও কি আপনি আশাবাদী হন নাই? আমি তো ভীষণ হয়েছি।

এখন ওদেরকে হাসিমুখে ঘরে ফিরতে দেন আর যে কাজ করার ওয়াদা করেছেন সেগুলোতে হাত দেন। তারপর আমরা সবাই মিলে একসাথে এগিয়ে যাই সামনের দিকে।

এবার নীচে এই আন্দোলনের কিছু জনপ্রিয় স্লোগানের লিস্ট দিয়ে দিলাম যদি আপনি মিস করে থাকেন এই ভয়ে।

১. হয়নি বলেই আর হবে না, আমরা বলি বাদ দে। লক্ষ তরুণ চেঁচিয়ে বলে পাপ সরাবো হাত দে।
২. যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ।
৩. জনপ্রতিনিধিদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন গণপরিবহনে যাতায়াত করতে দিতে হবে।
৪. পারলে মাথায় গুলি কর, তাহলে মেধা মারা যাবে, কিন্তু বুকে গুলি করিস না, এখানে বঙ্গবন্ধু ঘুমায়, বন্ধু জেগে গেলে সব ধবংস হয়ে যাবে।
৫. আমরা ৯ টাকায় ১ জিবি চাই না ‘নিরাপদ সড়ক চাই’।
৬. চার কোটি শুক্রাণুর সাথে লড়াই করে জন্মেছি, চাকার তলায় পিষার জন্য নয়।
৭. পথ খুলবে বলেই রাস্তা আটকাই।
৮. শিক্ষকের বেতের বাড়ি নিষেধ যেই দেশে, পুলিশের হাতে লাঠি কেন সেই দেশে।
৯. আর নবারুন ভট্টাচার্যর কবিতাটা যেটার লাইন আমার হুবহু মনে পড়ছে না।
১০. টনক তুমি নড়বে কবে?
১১. ন্যায্য দাবির মিছিলে যে চোখ সে চোখ জেগেছে জয়ে মিছিল কখনো থামে না বুলেটে স্লোগান থামে না ভয়ে।

আপনাকে ধন্যবাদ।

&dquote;&dquote;বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: