জেনে নিন কোরবানির প্রকৃত ইতিহাস

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৮, ০৪:২২ পিএম

মহান আল্লাহতায়ালার সম্মানিত নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ইরাকে ইসলাম প্রচারের কাজ করছিলেন। তৎকালীন অত্যাচারী বাদশাহ নমরুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। সে বিভিন্নরকম অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল। এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর স্ত্রী হযরত সারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশে হিজরত করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশাহ ছিলো জালিম ও ভীষণ বদলোক। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর সুন্দরী স্ত্রী হযরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশাহর দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশাহ তাদেরকে ধরে নিয়ে আসতে বলে। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারাকে বাদশাহর দরবারে হাজির করে।

বাদশাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছে জানতে চায়, তার সাথে স্ত্রী লোকটি কে? ইব্রাহীম (আঃ) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তো বা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে, তাই তিনি বলেন, সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে বন্দী করে, আর হযরত সারাকে বাদশাহর বদস্বভাব চরিতার্থ করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশাহর কু-প্রস্তাবে হজরত সারা রাজি নাহলে, বাদশাহ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়।

অতঃপর হযরত সারা দু’রাকা’আত সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশাহ তাঁকে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়। হজরত সারা সালাত শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেন যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশাহ অত্যন্ত অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশাহর মৃত্যুর জন্য তার লোকেরা হজরত সারাকে দায়ী করবে ভেবে, হযরত সারা বাদশাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশাহ হযরত সারার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হযরত হাজেরাকে তাঁর দাসী হিসেবে দিয়ে তাঁদেরকে বিদায় করে দেয়।

হযরত সারা ও হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হযরত সারা তাঁর দাসী হযরত হাজেরাকে হজরত ইব্রাহীম (আঃ)এর সাথে বিয়ে দেন। কারণ হজরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হজরত ইব্রাহীম (আঃ)এর বয়স তখন ১০০ বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও, তখনও হযরত সারা মা হতে পারেননি। তিনি ভাবলেন, শেষ বয়সে যদি আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে তাঁর স্বামী হজরত ইব্রাহীম (আঃ) কে কোনো সন্তান দান করেন। সে প্রার্থণা কবুল হল, তবে সন্তান জন্ম হল হজরত হাজেরার গর্ভে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর নাম রাখলেন, ইসমাইল(আঃ); যিনি আল্লাহ’র রহমতে নিজেও একজন নবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

&dquote;&dquote;হযরত ইসমাইল (আঃ) এর জন্মের পর, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর স্ত্রী হযরত হাজেরা ও একমাত্র ছেলেকে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে আরবের মক্কায় কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে সামান্য খেজুর ও এক মসক পানিসহ রেখে আসেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন তাঁদের এ অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হযরত হাজেরা প্রশ্ন করছিলেন, আপনি আমাদের এ নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ক্ষীণকন্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। আবারো হযরত হাজেরা প্রশ্ন করলেন এটা কি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হযরত হাজেরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করলেন।

যাই হোক, হযরত হাজেরা ও তাঁর সন্তানের খাদ্য ও পানীয় যখন শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি খাদ্য ও পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলেন। যখন নিরাশ হয়ে ফিরছিলেন, তখন তিনি দেখতে পেলেন তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল (আঃ) পায়ের গোড়ালি দ্বারা জমিনে আঘাত করলে মাটির নিচ থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হতে লাগল। এ সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে ‘জমজম’ নামে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পরিচিত। সুপেয় পানীয় হিসেবে এই বিখ্যাত কূপের পানি পান করে পরিতৃপ্ত হন মুসলমানরা। এটা কাবাকে কেন্দ্র করে ও হযরত ইসমাইল (আঃ) এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছিল।

মা হাজেরা তাঁর পানির পাত্র পূর্ণ করে নিলেন আর নিজেও তৃপ্তির সাথে পানি পান করলেন। এতে হজরত হাজেরার ক্ষুধা নিবারণ হল ও তাঁর শিশু পুত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় দুধেরও ব্যবস্থা হলো। হজরত হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন।

এরপর হযরত ইসমাইল (আঃ) এর যখন হাঁটা-চলা ও খেলাধুলা করার বয়স হল, তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে স্বপ্নে আদেশ করা হল, ‘তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর।’ ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) আবারো ১০০টি উট কোরবানি করলেন। আবারো তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো এ মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) ছাড়া আর তেমন কোনো প্রিয় বস্তু নেই। এর বাকি অংশটুকু অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে (হজরত ইব্রাহীম আ. কে) একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করলাম। সে যখন পিতার সাথে হাঁটা-চলার উপযোগী হল, তিনি (ইব্রাহীম আঃ) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কি? সে (হজরত ইসমাইল আঃ) বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর মেহেরবানিতে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন। অতঃপর যখন তাঁরা দু‘জন একমত হলো আর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করল এবং ইব্রাহীম (আ.) ইসমাইল (আ.) কে জবাই করার জন্যে কাত করে শুইয়ে দিলো; তখন আমি ইব্রাহীমকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইব্রাহীম, তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছো। নিশ্চয়ই এটা ছিল ইব্রাহীম ও ইসমাইলের জন্যে একটা পরীক্ষা। অতঃপর আমি ইব্রাহীমকে দান করলাম একটি মহা কোরবানির পশু। অনাগত মানুষের জন্যে এ (কোরবানির) বিধান চালু রেখে, তাঁর স্মরণ আমি অব্যাহত রেখে দিলাম। শান্তি বর্ষিত হোক ইব্রাহীমের ওপর। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’(সূরা আস সফফাত-১০১-১০৯)। এই সুমহান ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে নিজের কুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন দেয়ার নিমিত্তে কোরবানি করাকে সামর্থবানদের জন্য ওয়াজিব করা হয়। যদিও কোরবানির মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সুফল আরো ব্যাপক ও বিশদ। সূত্র: দারুল উম্মত ডটনেট

বিডি২৪লাইভ/এএআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: