ইবি প্রশাসনের পথচলার দুই বছর

প্রকাশিত: ২০ আগষ্ট ২০১৮, ১১:০৬ এএম

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এর মূল এজেন্ডাগুলোর মধ্যে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা যাতে করে দেশ-বিদেশের ছাত্র-ছাত্রীরাও এখানে পড়ালেখার সুযোগ পায়। কিন্তু, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা কারণে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার হাল ধরলেও দৃশ্যমান তেমন উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে পারেননি।

২০১৬ সালে ২১শে আগস্ট ১২তম উপাচার্য হিসাবে উপাচার্যের দায়িত্ব পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট কলামিস্ট, লেখক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী (রাশিদ আসকারী)। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে তার নতুন যৌবন। ড. রাশিদ আসকারীর বলিষ্ট নেতৃত্বে এবং তার মূলমন্ত্র ধরে উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শাহিনুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: সেলিম তোহা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিকীকরণের প্রত্যায়ে চলা বর্তমান প্রশাসনের দুই বছরপূর্তি হতে চলেছে আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ আগস্ট)।

বর্তমান প্রশাসনের দুই বছরের এই পথচলায় উন্নয়ন সাধন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ড. রাশিদ আসকারী দায়িত্ব গ্রহণের পর উপাচার্যের বাসভবনের ভাড়া হিসেবে তার পুরো হাউজরেন্ট কর্তনের নির্দেশ দেন যা বিগত উপাচার্যগণের সময় মাসিক তিনশত টাকা হারে কর্তন করা হতো। যেখানে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে মাত্র ২২টি বিভাগ ছিল সেখানে অধ্যাপক রাশিদ আসকারী দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে নতুন অত্যাধুনিক ৮ টি বিভাগ চালু করে শিক্ষার্থী ভর্তি ও সকল বিভাগে সফলভাবে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে সমর্থ হয়েছেন।

এক নজরে বর্তমান প্রশাসনের উন্নয়ন চিত্রের অংশবিশেষ:

১. প্রধান ফটকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দিত ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, একুশে কর্ণার স্থাপন।

২. দীর্ঘ ১৬ বছর পর গত ৭ জানুয়ারি মহামাণ্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এর উপস্থিতিতে দেশের সর্বোবৃহৎ সফল ৪র্থ সমাবর্তন আয়োজন।

৩. ধারাবাহিকভাবে মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ বিরোধী সচেতনতামূলক সভা সেমিনার ও দেশের সর্ববৃহৎ র‌্যালীর আয়োজন। সার্বিক নিরাপত্তায় পুরো ক্যাম্পাস পিটিজেট সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা।

৪. সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন (উপ প্রকৌশলী তৈমুর রেজা তুহিনকে পদ অবনমন করে শাখা কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসর, যৌন হয়রানীর অভিযোগে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে চাকরিচুত্য করা।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম ৫৯টি বিভাগ সম্বলিত সুচারু বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার রোডম্যাপ অর্গানোগ্রাম পাশ হয়েছে।

৬. চীন-জাপান-ভারত-নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরস্পর যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

৭. সকল বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা, এমফিল-পিএইচডির অর্ডিনেন্স আন্তজার্তিক মানে উন্নয়ন, ইনোভেশন হাব গঠনের মাধ্যমে খুদে বিজ্ঞানী তৈরি করা, সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যাপক কার্যকরী পদক্ষেপ (প্রধান ফটকে দৃষ্টিনন্দন অনেষ্টি ফাউন্টেইন ও দেশরত্ব শেখ হাসিনা হলের সামনে ফোয়ারা স্থাপিত হয়েছে, রাস্তাসমূহ একযোগে সংস্কার হয়েছে এবং নয়নাভিরাম লেকের নির্মাণ চলছে) গ্রহণ এবং সর্বোপরি সকল বিভাগে সেশনজট প্রায় শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, সেম্পোজিয়াম, ওয়ার্কসপ নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

৮. ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে ৬টি ভবন, পাওয়ার স্টেশন, নতুন পানির লাইন স্থাপনের কাজ একসাথে চলছে যা শেষ পর্যায়ে।

৯. এই প্রথম ৫০০ কোটি টাকার মেগা প্রোজেক্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নুতন ৯টি দশতলা ভবন এবং ১৯টি ভবনের ভার্টিকেল বর্ধিতকরন, আধুনিক বিজ্ঞান ল্যাবসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

১০. শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা প্রবর্তন করে এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে দীর্ঘ দিনের সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করে তিনি ভুয়শী প্রশংসা অর্জন করেছেন। এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতি ও এমসিকিউ এর সাথে ২০ নম্বরের লিখিত যুক্ত করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

১১. বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত ও আভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যার সুফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে।

বর্তমান প্রশাসনের দুই বছর মূল্যায়ন করতে গিয়ে একাধিক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষকতা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ইবির উন্নয়ন দেখে আমরা মুগ্ধ, মনে হচ্ছে ইবিতে রেনেঁসার যুগ শুরু হয়েছে এবং যেকোনো মূল্যে এই কর্মযজ্ঞ ধরে রাখতে হবে। অন্যদিকে, প্রগতিশীলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে কোনভাবে যেন অপশক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারীর দায়িত্বগ্রহণের দুই বছর পূর্তিতে তার সাধিত উন্নয়ন ও ভবিষৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা। তাই ব্যক্তিগত কোন এজেন্ডা নয়, বরং সকল সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর গতি যেন কেউ ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: