নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে যা বললেন আ’লীগ নেতারা

প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৪১ পিএম

বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হতে আর মাত্র দেড় মাস বাকি। আগামী ৩১ অক্টোবর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যাবে। এরপর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অক্টোবরে না হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গঠন হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার। এমনটাই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস হচ্ছে ডিসেম্বর। এই মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এ হিসাব মাথায় রেখেই আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

দিনক্ষণের হিসাবমতে, বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হতে বাকি আর মাত্র ১ মাস ২২ দিন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পুরোদমে। সংবিধান মোতাবেক একটি সুবিধা মতো সময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের ধাপগুলো সম্পন্ন করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে দেশব্যাপী প্রচারণায় নেমেছে ক্ষমসীন দল। বিভাগীয় জেলা শহরগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা করছেন সভা ও সমাবেশ।

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু নির্বাচনকালীন সরকার। এই সরকারের মন্ত্রিসভার আকার কেমন হবে, কারা থাকছেন তা নিয়ে  এখন জল্পনা-কল্পনা সবখানে।

সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সে হিসাবে সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। কিন্তু নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে হবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারীর মধ্য। সে ক্ষেত্রে আগামী অক্টোবর মাসে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে একটি ছোট আকারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ সংসদ নির্বাচন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যটি জানা যায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। অক্টোবর মাসে সম্ভাবনা বেশি। নির্বাচনী সরকারের পরিসর ছোট না বড় হবে এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তখন মন্ত্রিসভা ছোট হবে, তখন ঢাউস মন্ত্রিসভার প্রয়োজন নেই। মেজর কোনো পলিসি বা ডিসিশন নিতে পারবে না, সেই সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ সংসদ নির্বাচন। তবে তা নির্বাচনী সরকার গঠনের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ২৭ ডিসেম্বর হতে পারে। এর তিন মাস আগে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে দিয়ে ছোট পরিসরের একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে। তবে বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে। ওই মন্ত্রিপরিষদে কারা থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে বিএনপি বা সুশীল সমাজের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। বর্তমান সংসদে যেসব দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, তাদের মধ্য থেকেই এ পরিষদ গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন শেখ হাসিনা।

তবে দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ১৮ থেকে ২০ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এতে দলের সিনিয়র ও সরকারের একাধিক মন্ত্রী থাকবেন। ভিন্ন পরিস্থিতি না হলে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকদের থেকেও এই সরকারে ঠাঁই দেয়া হবে।

সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল মাল আবদুল মুহিত, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা অনেকটাই নিশ্চিত।

সংবিধানের ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।’

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে যিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে সংসদ বহাল রেখে সরকারের রুটিনওয়ার্ক পরিচালনা এবং নির্বাচন কমিশনকে অবাধ নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করা। নির্বাচনকালীন সরকার কবে নাগাদ গঠিত হবে এটা নিয়েও কোনো বাধ্যবাধতা নেই। এটা পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি চাইলে মন্ত্রিসভা ছোট না করে বর্তমান মন্ত্রিসভা নিয়েও নির্বাচন করতে পারেন।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: