‘আসি আসি বলে জোছনা’ কেন ফাঁকি দিয়েছিল!
ঢাকাই ছবির আশির দশকের ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ খ্যাত নায়িকা অঞ্জু ঘোষ গত শতকের শেষভাগে দেশ ছেড়ে ভারতের কলকাতায় পাড়ি জমান। পরে সেখানেই স্থায়ী হন। এতদিন নিজেকে অনেকটা আড়াল করেই রেখেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আমন্ত্রণে দীর্ঘ ২২ বছর পর বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দেশে এসেছেন তিনি।
এরপর রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এফডিসিতে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে এই জনপ্রিয় চিত্রনায়িকাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এসময় অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘এতো বছর পরও বাংলাদেশের সবাই আমাকে মনে রেখেছে ভাবতেই অবাক লাগছে। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। যদিও আমাদের সময়ের যারা শিল্পী ছিলেন আমি তাদের অনেককেই আজ এখানে দেখতে পাচ্ছি না। আজ আমি যে মাতৃভূমিতে পা রাখতে পেরেছি, তা আমার জন্য সৌভাগ্যের। এখানে আসার পর মনে হলো আমি তীর্থে পা রাখলাম।’
অঞ্জু বলেন, মাতৃভূমিতে পা রাখতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে তীর্থে পা রেখেছি। একটা সময় ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর কাজ হতো। কাজ করতে করতে মনে হতে শুটিংটাই ঘর-বাড়ি। তবে আজকে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে। অষ্টম-নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম। এরপর তো অনেকই হিট ছবি উপহার দিয়েছি। ভাবছি আবারও ফিরতে হবে। অভিনয় করতে হবে। আমি আসলে যদি একটুও পরিবর্তন হয়।
২২ বছর আগে দেশ ছেড়েছিলেন। আর ফেরেননি। কোনও অভিমান ছিল কী?
জবাবে অঞ্জু ঘোষ বলেন, আমার কোনোদিন কারও ওপরে অভিমান ছিল না। কারও ওপরে কোনও ক্ষোভও নেই। আমি দুইদিনের জন্যে কলকাতায় গিয়েছিলাম। মায়ের কথাতেই সেখানে থেকে যাই। তারপর কলকাতায় একের পর এক ছবি করতে থাকি। বাংলাদেশ আমার দেশ, আমার নিঃশ্বাস। যে নিঃশ্বাস নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সেই নিঃশ্বাস নিয়ে এখনও বেঁচে আছি।
তবে আসলেও কি অঞ্জু কোনো কারণ ছাড়াই দেশ ছেড়েছিলেন? পুরনো কথাবার্তা আর পত্রিকায় ছাপা হওয়া খবর-সাক্ষাৎকার অবশ্য তা বলে না। অন্তত ২০১৬ সালের জুলাইতে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনে কিন্তু অন্যরকম বয়ান রয়েছে।
ওই বছর মে মাসে ঢাকা থেকে কয়েকজন সাংবাদিক কলকাতা যান। সেখানে অঞ্জুর সঙ্গে দেখা করেন তারা। তাদের প্রশ্নের জবাবে তখন অঞ্জু বলেন, ‘দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার। স্বল্প সময়ে ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা দেখে অনেকেই আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। মানে ফিল্মি পলেটিক্সের শিকার হই আমি। তাই বাধ্য হয়েই কলকাতায় স্থায়ী হই।’
এ সময় তিনি আরো জানান, দেশে খুব একটা আসেন না এবং আসারও ইচ্ছা নেই।
আরও জানা গেছে, ‘রু’ আদ্যাক্ষরের এক চিত্রনায়কের সঙ্গে প্রেম ছিল তার। কিন্তু ১৯৮৫ সালে প্রেমিক নায়ক অন্যত্র বিয়ে করলে মন ভেঙে যায় অঞ্জুর। ওই বছরেই বিয়ে করেন তাকে সিনেমায় আনা পরিচালক এফ কবির চৌধুরীকে। নাম ও ধর্ম বদলে নিজে ফারজানা কবীর নাম নেন। তবে এই বিয়েটি টিকেছিল মাত্র চার মাস। এরপর অঞ্জুকে অনেক হতাশার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।
অঞ্জু ঘোষ সুঅভিনেত্রী; তার প্রমাণ রয়েছে ‘প্রাণ সজনী’, ‘বড় ভাল লোক ছিল’ নামের সিনেমাগুলোতে। আর বেদের মেয়ে জোছনাতে তার অভিনয় দেখে প্রশংসা করেছেন খোদ অমিতাভ বচ্চন। বিখ্যাত এইচএমভি’র মতো প্রতিষ্ঠান তাকে গোল্ডেন ডিস্ক দিয়ে সম্মাননা জানিয়েছে।
কলকাতায় ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ আর বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভের ‘হাম’ ছবিটি একই সঙ্গে মুক্তি পায়। কিন্তু হাম মার খেয়ে যায় জোছনার কাছে। অমিতাভ বাধ্য হয়ে দেখতে চান কী আছে বেদের মেয়েতে। সিনেমাটি দেখে তিনি অঞ্জুর অভিনয়ের প্রশংসা করেন বলে জানান অঞ্জু ঘোষ নিজে।
চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক যাত্রামঞ্চে তিনি বেশ সফল ছিলেন। সেখান থেকে সিনেমায় এসেও সফল। তার সময়ে তিনি দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয় আর নির্মাতাদের কাছে চাহিদাসম্পন্ন হিরোইন ছিলেন। নরম গরম, আবে হায়াত, রাজসিংহাসন জাতীয় ছবিগুলোতে তিনি একশ্রেণির দর্শকদের নয়নের মণি ছিলেন।
দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি বেদের মেয়ে জোছনায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি পরে কলকাতাতে রিমেক হয় সেখানেও নাম ভূমিকায় ছিলেন তিনি। বাংলাদেশি জোছনাতে নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন আর সেখানে ভারতীয় জোছনাতে তার নায়ক ছিলেন তাপস পাল।
বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা নিয়ে অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘এখন মানুষ চলচ্চিত্রের চেয়ে সিরিয়াল বেশি দেখেন। সিনেমা এখন সবার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। খারাপ লাগে ছবির মানুষগুলো দূরে সরে গেছে। আমাদের সময় সিনেমাকেই ঘর-সংসার মনে হতো। একটা সময় ছিল শুটিংস্পটই সব ছিল।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একটি সুখবরও জানা যায়। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র সেই আলোচিত জুটি অঞ্জু ঘোষ ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে আবারও দেখা যাবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে। ‘জোসনা কেন বনবাসে’ শিরোনামের চলচ্চিত্রে আবারও জুটি বাধতে পারেন তারা।
অনুষ্ঠানের প্রযোজক নাদের খান ছবিটি প্রযোজনা করতে চান। এ প্রসঙ্গে অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘অনেক বাঁধা পেরুতে হয়েছে দেশে আসতে। সবকিছু পেরিয়ে প্রিয় মানুষগুলোকে দেখতে এসেছি। তাই মন খারাপের কথাগুলো বলতে চাই না।’ তবে তার এই কথায় কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে আবারো প্রশ্ন করা হয়।
এরপর বিষয়টি পরিষ্কার করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অঞ্জু আসলে কী বলতে চাইছেন সেটা আমি একটু ক্লিয়ার করি। আসলে সিনেমা করতে তো আমাদের কারোরই আপত্তি নেই। আমরা তো সিনেমারই মানুষ। তিনি যেটা বলতে চাইছেন, সেটা হয়তো বুঝতে পারছেন না আপনারা। তিনি বলেছেন, তার আসা-যাওয়ার বিষয়ে খানিক জটিলতা আছে। সেসব সমস্যা যদি না থাকে, ছবির গল্প যদি পছন্দ হয় তাহলে এই সিনেমায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
দীর্ঘদিন পর বন্ধুকে পেয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বেদের মেয়ে অঞ্জুকে আজ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রাখলাম। বেশ ভালো লাগছে অঞ্জুর সাথে দেখা হয়ে। পেছনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।’
উল্লেখ্য, অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে ফোক-ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী চলচ্চিত্রে আনেন তাকে। অঞ্জুকে নিয়ে তৈরি করেন ‘সওদাগর’ ছবি।
এরপর ১৯৮৯ সালে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ তাকে রাতারাতি জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: