সর্বকালের সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রী যিনি!

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩৮ এএম

পিতৃপরিচয়হীন অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে অভিভাবকহীনতায় আশ্রয় জোটে এতিমখানায়। পরবর্তীতে জীবনের নানা উত্থান-পতন কাটিয়ে সময় যেন তাকে নতুনভাবে গড়ে তোলে। ছোটবেলার এই অসহয়ত্বই যেন সাফল্যে তার মনোবল হয়ে দাঁড়ায়। ভাগ্যের সুপ্রসন্নতায় মডেল হিসেবে শুরু হয় তার ক্যারিয়ার। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন মার্কিন অভিনেত্রী, মডেল এবং গায়িকা হিসাবে। দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মালেও সৃষ্টিকর্তা যেন দু'হাত ভরে সৌন্দর্য দিয়েছিল তাকে।

স্বর্ণকেশী এই সৌন্দর্যের রানীর নাম মেরিলিন মনরো। লাস্যময়ী মনরো তার হাসির ঝলকানিতে, অপার সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়, সুমিষ্ট কণ্ঠের আবেশে, তীক্ষ্ণ চাহনিতে মোহাবিষ্ট করে গেছে সমগ্র বিশ্বের লাখ লাখ তরুণকে। তাই মৃত্যুর অর্ধশত বছর পরেও সর্বকালের সেরা আবেদনময়ী তারকা ও অভিনেত্রী হিসেবে শীর্ষে স্মরণ করা হয় হলিউডের সৌন্দর্যের এ রানীকে।

রুপালী জগতে প্রবেশের পূর্বে ক্ষণজন্মা এই অভিনেত্রীর নাম ছিল নর্মা জীন বেকার। ১৯২৬ সালের ১ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে কাউন্টি নামক একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মনরোর শৈশব কেটেছে অনেক কষ্টে। অনাথ আশ্রমের কঠোর অনুশাসনের মাঝে তার জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এরপর ১২ বছর বয়সে এক পালক পিতা-মাতার গৃহে আশ্রয় পান মনরো, ফলে চাইল্ড হোমের অনুশাসন থেকে মুক্তি মেলে তার। সেখানে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতায় জীবনযাপন শুরু করেন। এই পালক মা ছিলেন তার আসল মায়েরই বান্ধবী। কিন্তু ভাগ্য সেখানেও তার সহায় ছিল না। ১৯৪২ সালে পরিবারে অভাব দেখা দেয়।

কষ্টের ভেতরেই প্রথমে মডেলিং ও পরে ১৯৪৬ সালে, প্রথম অভিনয় জগতে পা রাখেন মনরো। সেখান থেকেই নর্মা জীন বেকার নাম পরিবর্তন করে পরিচিত হন মেরিলিন মনরো নামে। বাদামী চুলের রঙ পরিবর্তন করে তাতে প্লাটিনামের সোনালী আভা আনেন, পরবর্তীতে এই স্বর্ণালী কেশই তাকে অন্যদের থেকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে দর্শকদের কাছে।

পরবর্তী দুই বছরে তার সাড়া জাগানো চলচিত্র রাইট ক্রস (১৯৫১), হোম টাউন স্টোরি (১৯৫১), ক্ল্যাশ বাই নাইট (১৯৫২), উই আর নট ম্যারিড (১৯৫২), নায়াগ্রা (১৯৫৩), জেন্টলমেন প্রেফার ব্লন্ডিস (১৯৫৩), হাউ টু মেরি এ মিলিয়নেয়ার (১৯৫৩) প্রভৃতি মুক্তি পায়। সবগুলো সিনেমাতেই তাকে যৌনাবেদনময়ী নারী হিসেবে পর্দায় দেখা যায়।

পর্দায় তার খোলামেলা পোশাক একদিকে যেমন সমালোচনার ঝড় তুলেছে, অন্যদিকে তিনি হয়ে ওঠেন লাখো তরুণের হৃদয়ের রানী। এর ভেতর 'জেন্টলমেন প্রেফার ব্লন্ডিস' সিনেমার জন্য তার অভিনয় বিপুলভাবে আলোচিত হয় এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন। ব্যবসাসফল এই সিনেমার আয় ছিল প্রোডাকশন খরচের দ্বিগুণ। 'হাউ টু মেরি এ মিলিয়নেয়ার' সিনেমাটিও বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলে। সে বছরেই খ্যাতির শীর্ষে অবস্থিত মনরো প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ উন্মুক্তভাবে নিজেকে প্রকাশিত করেন 'প্লে বয়' ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে।

ক্যারিয়ারের এই মধ্যগগনে জীবনের নানা হতাশায় তিনি অধিক ঔষধ সেবন ও মদ্যপান শুরু করেন। ফলে কাজে অনিয়ম আর অমনযোগী মনরো পরিচালকদের কাছেও অপ্রিয় হতে শুরু করেন। শোনা যায়, এরই মাঝে সন্তানসম্ভবা হলেও জটিলতার কারণে তিনি মা হতে পারেননি।

জীবনের নানা সময়ে নানা মানুষের সাহচর্যে বেষ্টিত থাকলেও শেষ জীবনে পাশে কেউই ছিলো না মনরোর। লস অ্যাঞ্জেলসে একাই থাকতেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের স্নায়ুযুদ্ধের সময় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সময় প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির একজন ঘনিষ্ট লোক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কেনেডির জন্মদিনের পার্টি থেকে ফেরার এক মাস পর, ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট লস অ্যাঞ্জেলসে নিজ বাসভবনেই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ড্রাগ ওভারডোজকে দায়ী করা হলেও অনেকে আজও বিশ্বাস করে মনরোকে হত্যা করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে।

মোহনীয় হাসি, ঝলমলে চুলের আভা আর হাসির জাদুতে মনরো রুপালী জগতের মাধ্যমে দর্শক-হৃদয়ে যে জায়গা করে গেছেন, তা আজও অমলিন। তাই মৃত্যুর ৫০ বছর পরও চলচিত্র জগতে সেরা অভিনয়ের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে তাকে 'গ্রেটেস্ট ফিমেল স্টার অফ অল টাইম' খেতাব দেওয়া হয়। সূত্র: বায়োগ্রাফিডটকম ও উইকিপিডিয়া

বিডি২৪লাইভ/এএআই/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: