বাহুবলের খাগাউড়া গ্রামে রামরাজত্ব কায়েম!

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪০ পিএম

ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার সীমান্তবর্তী খাগাউড়া গ্রাম। ওই গ্রামে রয়েছে একাধিক জলমহাল। যার আয়-ব্যয় গ্রামবাসীর মনোনীত ব্যক্তিরা করে থাকেন। গ্রাম উন্নয়নে ওই টাকা ব্যয় করা হয়। এ নিয়ে গ্রাম দু’ভাগে বিভক্ত। দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সম্প্রতি দু’পক্ষের সংঘর্ষে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি জুনায়েদ মিয়া নিহত হয়। এ খুনের ঘটনার পর থেকে জুনায়েদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে জুনায়েদের পরিবারের লোকজন দিশেহারা।

অপরদিকে জুনায়েদ হত্যা মামলার আসামীদের পুরুষশূন্য বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করছে সুযোগ সন্ধানীরা। আসামীদের বাড়িঘরের আতঙ্কগ্রস্থ নারীরা অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন এই ভাংচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে বাড়িঘর। বাদীপক্ষের লোকজন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এসব পরিস্থিতিতে সাধারণ লোকজন মন্তব্য করেন রামরাজত্ব কায়েম হয়েছে খাগাউড়া গ্রামে’। 

এমন পরিস্থিতিতে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করতে হবিগঞ্জের বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ গ্রামটি পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকরা কথা বলেন খুন হওয়া জুনায়েদের পরিবার ও খুনের ঘটনার পর আসামীদের ভাংচুর হওয়া বাড়িঘরের নারীদের সাথে। সাংবাদিকদের পরিদর্শনকালে গ্রামে বিভিন্ন সময় নির্যাতিত নিরীহ লোকজনসহ সাধারণ জনগণ অনেক তথ্য তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে। 

কৃষি অধ্যুষিত খাগাউড়া গ্রামের চারপাশে হাওর। পাশেই রয়েছে জলমহাল, বিল ও ছোট নদী। গ্রামের অনেকেই ইংল্যান্ড প্রবাসী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি থাকলেও রাস্তাঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। পুরো গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। খাগাউড়া ও কালাপুর গ্রামবাসী খাগাউড়া এলাকায় কয়েকটি সরকারি বিল ও জলাশয় রয়েছে। উক্ত বিলের আয়ের টাকা ব্যয় করা হয় গ্রাম উন্নয়নের কাজে। গ্রাম থেকে মনোনীত ব্যক্তিরা এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গ্রামের মনোনীত হিসেবে শাহ গেদা মিয়া ক্যশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তার সাথে ছিলেন গ্রামের প্রতি হাটি থেকে ১ জন। সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই ওই টাকা দিয়ে গ্রামের রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট উন্নয়ন কাজ করা হয়। বছরে লাখ লাখ টাকা আয় হয়। এর প্রতি দৃষ্টি সকলের। গ্রাম পরিচালনা নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এ বিরোধের জের ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন।

সূত্রমতে, গত বৈশাখ মাসে ইউপি সদস্য আব্দুর রহিমের গোষ্ঠীর রুহুল আমিনের সাথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দরা মিয়ার পক্ষের বদরু মিয়ার ছেলে জসিমের ঝগড়া হয়। এর জের ধরে গত রমজান মাসে তারাবীর নামাজে যাওয়ার পথে দরা মিয়ার লোকজন প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য আব্দুর রহিমের পক্ষের আলী মিয়াকে মারধোর করে। এ নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেন গ্রামের মাতব্বর শাহ শওকত মিয়া গং। 

ইউপি সদস্য আব্দুর রহিমের অভিযোগ এ জন্য শওকত ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন শওকত মিয়া। এতে রাজি হননি আব্দুর রহিমের গোষ্ঠীর লোকজন। এ নিয়ে শওকত গংদের সাথে রহিম মেম্বার গংদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্যে দু’টি পক্ষের বিরোধ চাঙ্গা হয়ে উঠে। এর অংশ হিসেবে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জসীম উদ্দিন এর নিকট গ্রামের শাহ শওকত আলী, শাহ ইয়াকুত মিয়া, শাহ গেদা মিয়া, তজম্মুল আলী, আব্দুস শহীদ, নুরুল ইসলাম, খালু মিয়া, আজম মিয়া, খেছলি মিয়া, হাবিজ মিয়া ও সেকেন মিয়া অর্থাৎ ১১ মাতব্বরের বিরুদ্ধে রহিম মেম্বারের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজী, গ্রামের টাকা আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রতিকারের দাবি জানানো হয়। 

এর প্রেক্ষিতে ওই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জসীম উদ্দিন খাগাউড়া গ্রামের স্কুল মাঠে গত ১১ জুলাই বৈঠক আহ্বান করেন। ওই বৈঠকে বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে অভিযুক্ত ১১ জন উপস্থিত হননি। বৈঠকে আব্দুর রহিম মেম্বারের পক্ষের লোকজন শাহ শওকত গংদের বিরুদ্ধে একতরফা অভিযোগ তোলে ধরেন। পরদিন ১২ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জসীম উদ্দিন এক নোটিশের মাধ্যমে অভিযুক্ত ১১ জনকে ১৭ জুলাই তার কার্যালয়ে শুনানীতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের জবাব দিতে নির্দেশ দেন। ১৬ জুলাই শাহ শওকত মিয়া গং সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহুত শুনানী আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তীতে রহিম মেম্বারের পক্ষের মৃত এখলাছ মিয়ার পুত্র জুনায়েদ আহমদ বাদী হয়ে শাহ শওকত গংদের বিরুদ্ধে বিল-জলাশয় সহ গ্রাম ফান্ডের প্রায় ১ কোটি সাড়ে ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বাহুবল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালতে হাজির হলে বিজ্ঞ বিচারক শাহ শওকত আলী, গেদা মিয়াসহ কয়েকজনকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এরা জেলে থাকাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে আরো একটি মামলা করা হয়। গত ঈদুল আযহার পূর্বে ১৯ আগস্ট জেল থেকে শাহ শওকত গং মুক্তি লাভ করেন। এ সব কারণে দু’পক্ষের বিরোধ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে।

&dquote;&dquote;

এদিকে ওই গ্রামে বিবাদমান দুপক্ষে বিরুদ্ধে কোন সভা সমাবেশ না করার জন্য প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ অবস্থায় কোন পক্ষ বৈঠক করলে অপর পক্ষ পুলিশের স্মরণাপন্ন হয়। এমনি ভাবে গত ২৪ আগষ্ট রহিম মেম্বারের লোকজন বৈঠকে বসে। এ খবর পুলিশকে জানায় শাহ শওকত আলীর লোকজন। এতে পুলিশ এসে তাদের সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। পরবর্তীতে ওই দিনই সন্ধ্যার দিকে রইছগঞ্জ বাজার প্রকাশিত খাগাউড়া বাজারে শাহ শওকত আলীর পক্ষের শাহ জমশেদ মিয়ার মালিকানাধিন কাশফুল নামে একটি দোকান ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে শওকত পক্ষের লোকজন বাজারে আসলে ঊভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষে প্রায় ৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে আহত জুনায়েদ মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট নিয়ে যাবার পথে মারা যান। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। নিহত জুনায়েদ মিয়া ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ছিলেন। তার খুনের ঘটনায় এলাকাবাসীকে মর্মাহত করেছে। শোকাহত নিহত জুনায়েদের পরিবারের সদস্যরা।

সাংবাদিকরা প্রথমেই যান নিহত জুনায়েদ মিয়ার বাড়িতে। ওই বাড়িতে স্বজন হারানোর কান্না এখনো চলছে। সাংবাদিকদের দেখে জুনায়েদের মা-বাবা ও ভাই-বোনেরা কান্নায় ফেটে পড়েন। তার পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, জুনায়েদরা ৫ ভাই ও ৬ বোন। জুনায়েদ সবার বড়। তিনি ছোট বেলা থেকে বাড়ির বাইরে থেকে লেখাপড়া করেছেন। হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি ঔষধ কোম্পানিতে রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে চাকরি নেন। ৩ বছর পূর্বে জুনায়েদ মিয়া বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে নবীগঞ্জে থাকতেন। এর মধ্যে জুনায়েদ মাহা নামের এক কন্যা সন্তানের পিতা। বর্তমানে মাহার বয়স ১ বছর। একমাত্র মেয়ে মাহাকে নিয়ে সুখেই চলছিল তাদের সংসার। ঈদের ছুটিতে নবীগঞ্জ থেকে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে যান জুনায়েদ। এ ঘটনায় নিহত জুনায়েদের ছোট ভাই শিব্বির আহমেদ বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় শাহ শওকত আলী, শাহ গেদা মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী শিব্বির আহমেদ জানান, গ্রামের ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয় নিয়ে আব্দুর রহিম গংদের সাথে শওকত মিয়া গংদের বিরোধ চলছিল। এতো বিরোধ থাকলেও এর উর্ধ্বে ছিলেন জুনায়েদ মিয়া। কিন্তু শওকত মিয়াসহ তাদের লোকজন নির্মমভাবে জুনায়েদ মিয়াকে হত্যা করেছে। এসব লোকজনদের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই খাগাউড়া গ্রামে অশান্তি বিরাজ করছিল। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে ওই গ্রামটিতে আর পরিবর্তন হবে না। আমরা তাদের বিচারের মাধ্যমে গ্রামের পরিবর্তন দেখতে চাই।

নিহত জুনায়েদের পিতা আব্দুল আউয়াল উচা মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, গ্রামের ২টি পক্ষের মধ্যে ফান্ডের টাকা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের কোন কিছুই জুনায়েদ জানতো না। কিন্তু শওকত গং আমার ছেলেটাকে হত্যা করলো। আমি আল্লাহ’র কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ঘাতকদের যেন ফাঁসি নিশ্চিত করা হয়।

নিহত জুনায়েদের মা নেয়া খাতুন কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন- তার ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তারা কখনও অন্যায় কাজের সাথে জড়িত নয়। জুনায়েদ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো। কিন্তু শওকত গং আমার ছেলেকে ফিকল দিয়ে ঘা মারতে মারতে হত্যা করলো। আমি একজন মা হয়ে ছেলের এ মৃত্যু মেনে নিতে পারি না। আমি আমার ছেলের খুনীদের ফাঁসি চাই।

জুনায়েদের বোন মান্না আক্তার বলেন, বড় ভাই জুনায়েদের উপার্জনসহ বাবার কৃষি জমি থেকে উত্তোলনকৃত ধানের আয় দিয়ে আমাদের সংসারটা অনেক সুখেই চলছিল। আমার ভাইয়েরা গ্রামের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। বড় ভাই জুনায়েদ চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু ঘাতকরা আমার নির্দোষ ভাইকে বিনা কারণে হত্যা করেছে। ঘাতকদের যেন ফাঁসি হয়।

জুনায়েদ খুনের ঘটনায় ৩৮ জনকে আসামী করা হলেও গ্রামের মাতব্বর শাহ শওকত আলী গং এর উপর চরমভাবে বিক্ষুব্ধ প্রতিপক্ষের লোকজন। সকল আক্রোশ যেন শওকতের উপর। খাগাউড়া গ্রামে শওকতসহ তার স্বজনদের ভাংচুর ও লুটপাট হওয়া বাড়িঘর দেখে যে কেউ এমন মন্তব্যই করবেন। জুনায়েদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী শওকত মিয়ার বাড়িতে গিয়ে বর্বরতার দৃশ্য দেখা যায়। তার বাড়িতে প্রবেশের রাস্তায় তার দোকান ভাংচুর ও গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শওকত মিয়া, লিয়াকত মিয়াসহ কয়েকজনের বাড়িঘর এমনভাবে ভাংচুর করা হয়েছে যে সেখানে কারো বসবাস করা আর সম্ভব নয়।

এ সময় বাড়িতে উপস্থিত শাহ শওকত মিয়ার স্ত্রী খালেদা আক্তার জানান, আব্দুর রহিমের লোকজন তাদের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। হামলাকারীরা তার ঘর থেকে ৩শ’ মণ ধান, নগদ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এমনকি ঘর ভেঙ্গে তারা ইট পর্যন্ত নিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর নিশ্চিহ্ন করে ফেলায় তারা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামের সাংবাদিক এসেছেন এ খবর পেয়ে তারা বাড়িতে এসেছেন। 

শাহ ইয়াকুত মিয়ার স্ত্রী নাজিরা আক্তার জানান, আব্দুর রহিম মেম্বারের পক্ষের লোকজন তার বাড়িতে প্রবেশ করে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী কন্যা রেজিয়া আক্তারের সর্বনাশ করার হুমকি দিয়ে তার ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। হামলাকারীরা তার ঘর থেকে ২শ’ মণ ধানসহ ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। 

তিনি বলেন- নিরাপত্তার অভাবে তার মেয়ে রেজিয়া স্কুলে আসা যাওয়া বাদ দিয়েছে। তারা রেজিয়াকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে দেবেনা বলে হুমকী দিয়েছে। বাড়ির অন্যান্য ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। শাহ সফিক মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা জানান, তাদের ঘর থেকে ৫০ মন ধানসহ ৩ লক্ষাধিক টাকা মালামাল লুট হয়েছে। বর্তমানে পুরুষশূন্য বাড়িতে তারা নিরাপত্তীনতায় ভুগছেন।

এছাড়া শাহ শওকতের পক্ষের শাহ জমসেদ মিয়া, সাবেক মেম্বার মেহের চান বিবি, কালু মিয়া, ঝানু মিয়া, কনু মিয়া, আবুল হাসান, নুনু মিয়া, মানিক সুত্রধর, গনেশ সুত্রধরে, মুকেন সূত্রধর, জিলু মিয়া, চেগেন মিয়া, আব্দুস শহীদ, দিলবর মিয়া, সোহেল মিয়া, শাহমুল, আফিল, মহিবুল হাসানসহ আরো কয়েকজনের বাড়িতে বর্বরতা চালানো হয়েছে। দফায় দফায় চালানো হয়েছে হামলা, লুটপাট। অনেকের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বসতঘর। জনমানবহীন এসব বাড়ি। উল্লেখিত ব্যক্তিদের বাড়ি ও দোকান থেকে কয়েক শত মণ ধান-চাল, অর্ধশতাধিক গরু-ছাগল, আসবাবপত্র, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নেয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে ঘরের সবকিছু। এক সময় যেসব বাড়িতে মানুষের ছিল সরব অবস্থান, আজ সেসব বাড়ি যেন মৃত্যুপুরী।

বাদী পক্ষের সর্দার ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম জানান, খাগাউড়া ও কালাপুর গ্রামবাসী খাগাউড়া এলাকায় কয়েকটি সরকারি বিল ও জলাশয় দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছে। উক্ত বিলের আয়সহ গ্রামের ফান্ডের প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা জুনায়েদ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শাহ গেদা মিয়া ও শাহ শওকত মিয়া গং আত্মসাত করেছে। তাদের যন্ত্রণায় এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এসব আয় ব্যয়ের হিসেব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। পুলিশ প্রশাসন এ অবস্থায় গ্রামটির বিবাদমান পক্ষদ্বয়কে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। 

রহিম মেম্বার জানান, গত ২৪ আগস্ট রইছগঞ্জ বাজারে পরিকল্পিতভাবে আমার চাচাত ভাই জুনায়েদকে হত্যা করা হয়েছ। এখন শওকত গং জুনায়েদ হত্যা মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তারা নিজেরা নিজেদের বাড়ি ভেঙ্গে আমাদের উপর মামলা দায়ের করেছে।

নবীগঞ্জ ও বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এখনও গ্রামটি পুলিশের নজরদারীতে রয়েছে। লুটপাটের যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বাহুবল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে খাগাউড়া গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা চলা অবস্থায় হঠাৎ করেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে গেছে।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: