কন্ঠশিল্পী ন্যান্সি ও তার স্বামীকে গ্রেফতারের দাবি

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ এএম

স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় স্বামী শাহারিয়ার আমান সানি গ্রেফতার হলেও উস্কানির দায়ে অভিযুক্ত সানির বড় বোন কন্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি ও তার স্বামী নাদিমুজ্জামান যায়েদ এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় নেত্রকোনার নারী সমাজে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নারী সমাজের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিচ্ছেন তারা।

এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামী ও তাদের লোকজনের অব্যাহত হুমকি ধামকিতে চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছে মামলার বাদী শানু ও তার পরিবার। ভিকটিমের পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করণসহ অচিরেই তদন্ত করে ন্যান্সি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন খান। এছাড়াও আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন নেত্রকোনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ পিপি রাসেল আহমেদ খান।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে নেত্রকোনা মডেল থানায় ন্যান্সির ভাইয়ের স্ত্রীর দায়ের করা মামলার ঘটনায় প্রধান আসামী সানিকে গ্রেফতারের পর শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরবর্তীতে আদালত সানিকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। একই মামলায় কন্ঠশিল্পী ন্যান্সি ও তার বর্তমান স্বামী নাদিমুজ্জামান যায়েদের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য অত্যাচার নির্যাতন করতে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনয়ন করেন ৪ মাসের এক কন্যা শিশু সন্তানের জননী সামিউন্নাহার শানু।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে পারিবারিক ভাবেই ২০১৭ সালে সানি ও শানুর বিয়ে সম্পন্ন হয়। আর বিয়ের পর থেকেই বেকারত্ব দেখিয়ে বোন ন্যান্সি ও বোন জামাই যায়েদের উস্কানিতে বিভিন্ন ভাবে ফায়দা নিতে শুরু করেন তার স্বামী সানি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ আগস্ট রাতে স্ত্রী শানুর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে শাহারিয়ার আমান সানি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ৪ মাসের শিশু সারাকে দুগ্ধ পান করানো অবস্থায় তাকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী শানু।

পরবর্তীতে খবর পেয়ে পুলিশের সহায়তা তার ভাইয়েরা তাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা প্রদান করে। এমন নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের খবর স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেও ন্যান্সি ও তার স্বামী যায়েদ এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনার নারী সমাজে।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেত্রকোনা মহিলা পরিষদের সাধারন সম্পাদক তাহেজা বেগম বলেন, যৌতুকের জন্য ন্যান্সি ও তার বর্তমান স্বামীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে ছোট ভাই সানির হাতে নির্যাতনের স্বীকার হওয়া স্ত্রী শানুর প্রতিকার চেয়ে একটি অবেদন তাদের হাতে এসেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে মামলার প্রধান আসামী সানিকে গ্রেফতার করেছে। কিন্ত ইন্ধনদাতা ন্যান্সি ও যায়েদ প্রভাব খাটিয়ে এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। তিনি অবিলম্বে ইন্ধনদাতাদেরকেও গ্রেফতারের দাবি জানান। ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ভিকটিম শানুর পাশে থাকারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

নেত্রকোনা জেলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সৈয়দা সামছুন্নাহার বিউটি জানান, ন্যান্সি জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী হলেও তার ছোট ভাইকে দিয়ে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর উপর অত্যাচার নির্যাতন চালানোর ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শুনেছি, তার সাতপাইস্থ বিশাল অট্টালিকায় মদ জুয়া নারীসহ নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। তিনি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নজরদারী বাড়ানোর পাশাপাশি অভিযুক্ত ন্যান্সি ও তার স্বামীকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

বেসরকারি সংস্থা ‘স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নারী উন্নয়ন কর্মী কোহিনুর বেগম, যৌতুকের জন্য সামিউন্নাহার শানুর উপর চালানো অত্যাচার নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সকল আসামীদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানান। অন্যথায় মহিলাদের নিয়ে কাজ করা সকল সংগঠনকে সাথে নিয়ে এ ব্যাপারে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত সকল আসামীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করণের দাবি নারী নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়দের।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: