ভরা মৌসুমেও সাগরে ইলিশ নেই, জেলেরা হতাশ

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:১৩ এএম

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টা। সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে নৌকা উপকূলে ভিড়তে শুরু করেছে। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের জটলা। সবাই ইলিশ কিনতে ভিড় করছে সেখানে। যত ক্রেতা দেখা গেল ঠিক সে পরিমাণ ইলিশ জেলেদের আনতে দেখা যায়নি। সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি রয়েছে পাইকার, দাদনদার। ফলে দামও বেশি হাঁকছে জেলেরা। শনিবারের এ চিত্র চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের ফেরী ঘাট এলাকার।
  
জেলেরা জানান, ইলিশের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। সন্দ্বীপ চ্যানেলে প্রচণ্ড স্রোতে আশানুরুপ ইলিশের দেখা নেই। অনেক জাল ফেটে নষ্ট হচ্ছে। ফলে জাল তুলে নিয়ে আসতে হচ্ছে জেলেদের। এদিকে ইলিশের বেশি ধরা না পড়ায় বরফ বিক্রেতারাও পড়েছে বিপাকে। তাদের সংরক্ষণে থাকা বরফ বিক্রি না হওয়ায় গলে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, একটি নৌকা খালে ঢুকলে খুচরা ক্রেতা ও পাইকারের লোকেরা ঝাপিয়ে পড়ছে নৌকার দিকে। কোন কোন নৌকায় ছোট ছোট টুকরিতে ৩০ কেজি কিংবা তার কাছাকাছি ইলিশ দেখা গেছে। 

সাগর ফেরত কুমিরা এলাকার জেলে রুবেল দাশ বলেন, তার ১০টি জালে মাত্র ১৮ কেজি মাছ পেয়েছেন। গত বছর এ দিনে কমপক্ষে তিন মণ (১২০ কেজি) মাছ পেয়েছিলেন। 

অপর জেলে রুহি দাশ বলেন, ২০টি জাল বসাতে দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন। ছয়জন শ্রমিক আছে মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনে। মৌসুম শেষ এখন পর্যন্ত মাছ বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ঋণের টাকা কিভাবে শোধ করবেন সে চিন্তায় আছেন তিনি। 

উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৯৪১ মেট্রিকটন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০ মেট্রিকটন। শনিবার পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬৮০ মেট্রিকটনের কাছাকাছি।

সীতাকুণ্ডের পাইকার নুরুল আমিন বলেন, শনিবার তিনি ছোট-বড় ছয় মণ (২৪০ কেজি) কিনেছেন। ছোট ইলিশ কেজি পড়েছে ১২০ টাকা, মাঝারি ধরনের (৫০০ থেকে ৬০০গ্রাম) ইলিশ ৭-৮ হাজার টাকা, বড় ইলিশ (৬০০ গ্রামের বেশি এক হাজার ২০০গ্রাম) ১৬-২৬ হাজার টাকা, তার চেয়ে বড় ইলিশ ৬০-৯০ হাজার টাকা। 

কুমিরা এলাকার বরফ বিক্রেতা মুজিবর রহমান বলেন, ৮০ কেজি ওজনের একটি বরফ খণ্ড বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। শনিবার বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫০টি। অথচ গত বছর এদিনে বিক্রি হয়েছে ২০০টি বরফ খণ্ড। গত বছরে বরফ বিক্রি বেশি হয়েছে বলে এ বছর স্টোর করেছেন বেশি। এখন বিক্রি হচ্ছে না। বরফ গলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, তিনি জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন সন্দ্বীপ চ্যানেলে এবার স্রোত বেশি। ফলে গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ ইলিশ কম পড়বে সীতাকুণ্ডে। তবে সীতাকুণ্ডের উত্তরাংশের তুলনায় দক্ষিণাংশে তুলনা মূলক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। সেখানে কোন কোন নৌকায় একদিনে ছয় থেকে সাত মণ ইলিশ পেয়েছে বলে জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: